খালেদা জিয়ার ঐতিহাসিক জানাযায় লাখো মানুষের সমাগম

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৪৩

ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা জানাজায় অংশগ্রহণ করেন লাখ লাখ মানুষ। বিশ্বে কোনো মুসলিম নারীর এটিই সর্ববৃহৎ জানাজা

বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম ও মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।

স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামের জন্য তিনি আপসহীন দেশনেত্রী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের জন্য গণতন্ত্রের মাতা ও জাতীয় নেত্রী হিসেবে জনগণের ভালবাসায় তিনি সম্মানিত হন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও লাখ লাখ নেতাকর্মী জানাজায় অংশ নেন।

এ ছাড়া বিদেশী কূটনৈতিকরা এই জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।

জানাজায় ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের খতিব।

এর আগে, শুধু মানিক মিয়া এভিনিউয়েই নয়, আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মানুষ অবস্থান নেয় জানাজায় অংশ নিতে। সেখানে তিল ধারণের জায়গা ছিল না।

ধারণা করা হচ্ছে, এটি ইতিহাসে কোনো মুসলিম নারীর সর্ববৃহৎ জানাজা। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং মুসলিম বিশ্বের স্মরণকালের বড় জানাজা।

জানাজার পর, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেয়া হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লাশ।

লাল সবুজের পতাকায় মোড়ানো লাশ বহনকারী গাড়িটি বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার পর সেখানে প্রবেশ করে।

প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালীন তিনি যে সব বক্তব্য দিয়েছেন, সে সব বক্তব্য জানাজাস্থলে প্রচার করা হচ্ছে।

সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় খালেদা জিয়ার লাশ সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে ১১টার পর পরই প্রবেশ করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লাশবাহী গাড়ি।

এর আগে এদিন সকাল সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে লাশবাহী গাড়িটি তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কফিনের পাশে বসে কুরআন তেলাওয়াত করেন তার বড় ছেলে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জানাজায় অংশ নেয়া মানুষ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আমৃত্যু দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে যে সংগ্রাম করেছেন, আর তার শেষ বিদায়ে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিততে ইতিহাসের বৃহত্তম জনসমুদ্র তাকে কৃতজ্ঞ চিত্তে শ্রদ্ধা জানালো।

জানাজায় অংশ নেয়া আলমগীর, আদিব ও সুলাইমানসহ আরো অনেকে বলেন, দেশের ইতিহাসে এটিই কোনো জানাজায় বৃহত্তম উপস্থিতি। এটি শুধুই জনসমুদ্র নয়, মহা জনসমুদ্র।

তারা আরো বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতা কতটা জনপ্রিয় ও ভালোবাসার হলে এরূপ হতে পারে, বেগম খালেদা জিয়া সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলেন।

তারা বলেন, দীর্ঘ ৪৫ বছরে তার রাজনৈতিক লড়াই ও অবদান ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন।

এর আগে বেগম খালেদা জিয়ার লাশ গুলশান থেকে জানাজার উদ্দেশে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

তার লাশ বহনকারী জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়িটি সংসদ ভবন এলাকা নেয়া হয়।

আজ বেলা ১১টার দিকে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িবহর তারেক রহমানের গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসা থেকে বের হয়। পৌনে ১১টার পর গাড়িবহর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছায়।

গাড়িবহরে লাল-সবুজ রঙের একটি বাসও রয়েছে।

তারেক রহমান, তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা রহমান ও ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা জানাজাস্থলে উপস্থিত হন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বেগম খালেদা জিয়ার স্বজনরাও এই গাড়িবহরে ছিলেন।

আজ সকাল সোয়া ৯টার পর শেষবারের মতো বেগম খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় নেয়া হয়।

পরে গাড়িটি তারেক রহমানের গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসায় নেয়া হয়। সেখানে খালেদা জিয়ার স্বজন ও বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান।

সেখানে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন তারেক রহমান।

রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বুধবার বাদ জোহর বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

বেগম খালেদা জিয়াকে তার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন হচ্ছে।

জানাজায় অংশ নিতে মঙ্গলবার রাত থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে।

মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।

শেষবারের মতো খালেদা জিয়াকে এক নজর দেখার আশায় তারা গণপরিবহন, ট্রেন, লঞ্চ ও ব্যক্তিগত যানবাহনে করে রাজধানীতে আসেন।

জানাজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা ও সেখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

গতকাল বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া মারা যান। তার মৃত্যুতে বুধবার থেকে শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর এবং ১ ও ২ জানুয়ারি) পর্যন্ত তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার।

এ ছাড়া বুধবার সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

আপসহীন দেশনেত্রী ও জাতীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে শোকে স্তব্ধ পুরো বাংলাদেশ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: