সংগৃহীত ছবি
                                    দেড় মাসের বেশি সময় ধরে অবরোধ ও হরতালের মত কর্মসূচি দিয়ে আসা বিএনপি এবার সরকারের বিরুদ্ধে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে’র ডাক দিয়েছে। এই আন্দোলনে অংশ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনি দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। সরকারকে কর, খাজনা এবং বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির বিল পরিশোধ বন্ধ করে দেওয়া এবং ব্যাংকে আমানত না রাখার আহ্বানও জানানো হয়েছে। মামলার আসামি দলীয় নেতাকর্মীদেরকে আদালতে হাজিরা না দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
২০ ডিসেম্বর, বুধবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এসব আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “প্রতিটি নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আজ থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার অবৈধ সরকারকে সব ধরনের অসহযোগিতা শুরু করার বিকল্প নেই। এই মুহূর্ত থেকে এই অবৈধ সরকারকে সহযোগিতা না করার জন্য প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।”
বিএনপি কী কী চাইছে তা তুলে ধরে রিজভী বলেন, “আপনারা ৭ জানুয়ারির ‘ডামি নির্বাচন’ বর্জন করুন। ‘ডামি নির্বাচনের’ নামে ৭ জানুয়ারির ‘বানর খেলার আসরে’ অংশ নেবেন না। আপনারা কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। এটি আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার।
নির্বাচন কমিশন ৭ জানুয়ারি কাকে এমপি ঘোষণা করবে সেই তালিকা তৈরি হয়ে গেছে। সুতরাং ৭ জানুয়ারির ‘ডামি নির্বাচনের’ ভোট গ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালনে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, “বর্তমান ‘অবৈধ সরকারকে’ সব ধরনের ট্যাক্স-খাজনা-ইউনিটিলিটি বিলসহ অন্যান্য প্রদেয় স্থগিত রাখুন। ব্যাংকগুলো এই অবৈধ সরকারের লুটপাটের অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং ব্য্যাংককেরে টাকা জমা রাখা নিরাপদ কি না সেটি ভাবুন।“মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় আজ হতে আদালতে হাজিরা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনাদের প্রতি সুবিচার করার আদালতের স্বাধীনতা ফ্যাসিবাদী এই সরকার ‘কেড়ে নিয়েছে’।”
সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে নির্বাচন এবং তফসিল বাতিলের দাবিতে গত ২৯ অক্টোবর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলো চার দফায় পাঁচ দিন হরতাল এবং এগারো দফায় ২২ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে।
আগামী ২১ থেকে ২৩ ডিসেম্বর লিফলেট বিতরণ শেষে ২৪ ডিসেম্বর রোববার আবার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের ডাক এসেছে।
দফায় অবরোধ-হরতালে সারা দেশে যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। নানা ধরনের নাশকতায় প্রাণহানিও ঘটেছে। গত কয়েক দিন ধরে রেলে নাশকতা আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে বিশেষভাবে আলোচিত হয়ে উঠেছে। ট্রেন লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে, আগুন দেওয়া হয়েছে কোচে।
রিজভী বলেন, “আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতা পেতে হলে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গণতন্ত্রকামী প্রতি মানুষকে ক্ষমতাসীনদের ‘অসহযোগিতা’ করা ছাড়া বিকল্প নেই। এই আন্দোলনে বিজয় লাভ করেই এই ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে রেখে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। ঐক্যভাবে এই সরকারকে অসহযোগিতা অব্যাহত রাখলে গ্রেপ্তার-নির্যাতন-হয়রানি করার সাহস পাবে না।”
সরকারকে অসহযোহিতা করতে গিয়ে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষদের মধ্যে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাসও দেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘‘পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকার অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেবে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং লুন্ঠিত ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষে যারাই হতাহত হয়েছে ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক সরকার তাদের অবদান দলীয় ও রাষ্ট্রৗয়ভাবে দেবে।”
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: