
আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় এবার ১৯টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসছে। রাজধানীর এই হাটগুলোতে আগত পাইকার ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। লেনদেনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে হাটগুলোতে বিভিন্ন ব্যাংক তাদের বুথ স্থাপন করবে।
এরমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসসিসি) বসছে ১০টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) বসছে ৯টি হাট। ঈদুল আজহার দিনসহ মোট ৫ দিন নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য হাট বসবে।
ইতোমধ্যে দুই সিটি কর্পোরেশনই হাটের ইজারা চূড়ান্ত করতে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করেছে। সর্বোচ্চ দরদাতাকে হাটের ইজারা দেয়া হবে। তবে কোনো হাটে কাঙ্ক্ষিত দর পাওয়া না গেলে সেটি আবারো ইজারা দেয়া হবে বলে দুই সিটির সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা বাসসকে জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন যে, সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থানের বাইরে কোনও অস্থায়ী পশুর হাট বসতে দেয়া হবে না।
১০টি অস্থায়ী হাট বসাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে ভাটারা সুতিভোলা খালসংলগ্ন খালি জায়গা ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা, উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরসংলগ্ন বউ বাজার এলাকার খালি জায়গা ৮ কোটি ৯০ লাখ, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাবনগরের এম-৪, এম-৫ ও এন-৪ ব্লক (লেকের উত্তর পার্শ্বে আংশিক), সানভ্যালি (আংশিক) এর খালি জায়গা ১ কোটি ৭৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা, মিরপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা ১ কোটি ৩৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৮৬ টাকা, মোহাম্মদপুর বছিলার ৪০ ফুট রাস্তাসংলগ্ন খালি জায়গা ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন খালি জায়গা ৬৪ লাখ ২ হাজার ৪শ’ টাকা, খিলক্ষেত থানাধীন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মস্তুল চেকপোস্ট সংলগ্ন পশ্চিম পাড়ার খালি জায়গা ১ কোটি ৭ হাজার ৫শ’ টাকা, ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে ১০নং সেক্টর রানাভোলা স্লুইসগেট পর্যন্ত খালি জায়গা ৮১ লাখ ২০ হাজার টাকা, মিরপুর কালশী বালুর মাঠের খালি জায়গা ৮০ লাখ টাকা এবং খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক এলাকার খালি জায়গা ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা সরকারি ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে।
উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, প্রথম পর্যায়ে দরপত্র বিক্রির শেষ তারিখ ছিল ১৫ মে বৃহস্পতিবার। এখন দরপত্রগুলো মূল্যায়ন করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৬ মে দরপত্র বিক্রি শেষ হবে। প্রথম পর্যায়ে সরকারি দরের চেয়ে বেশি দর দাখিল করলে দ্বিতীয় পর্যায়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে না বলে তিনি জানান।
হাটে আগত পাইকার ও ক্রেতাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সেনাবাহিনী, র্যা ব, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। নিরাপদ লেনদেনের জন্য প্রতিটি হাটে ব্যাংকগুলোর বুথ থাকবে। জাল টাকা শনাক্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে হাটগুলোতে মেশিন রাখা হবে। মোহাম্মদ এজাজ জোর দিয়ে বলেন, ইজারাদারদের অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে এবং জনসাধারণের রাস্তাঘাটে বিঘ্ন সৃষ্টি করা এড়িয়ে চলতে হবে।
৯টি অস্থায়ী হাট বসাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ১ কোটি ৭৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৩৪ টাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পশ্চিম পার্শ্বে নদীর পাড়ে খালি জায়গা ২ কোটি ৬৯ লাখ ৯৮ হাজার ২শ’ টাকা, দনিয়া কলেজের পূর্ব পার্শ্বে ও সনটেক মহিলা মাদ্রাসার পূর্ব পশ্চিমের খালি জায়গা ৪ কোটি ৭২ লাখ ৫ হাজার ৬১১ টাকা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বের খালি জায়গা ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল ৪ কোটি ৬৪ লাখ ১৫ হাজার ২৮০ টাকা, রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৪ টাকা, শ্যামপুর কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ডসংলগ্ন খালি জায়গা ৬৬ লাখ ৯৬ হাজার ২০ টাকা, ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পার্শ্বের খালি জায়গা ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪শ’ টাকা, কমলাপুর সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের পূর্ব পার্শ্বের খালি জায়গা ৩ কোটি ৭৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা এবং আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের উত্তর পূর্ব পার্শ্বের খালি জায়গা ৫৩ লাখ টাকা সরকারি ইজারা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এম জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখতিয়ারের অধীনে সাতটি অস্থায়ী পশুর হাট স্থাপনের জন্য আমরা (এখন পর্যন্ত) দরদাতাদের কাছ থেকে সাড়া পেয়েছি।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইছার মোহাম্মদ ফারাবি জানান, প্রথমে রাজধানীর আফতাবনগর ও মেরাদিয়ায় পশুর হাট বসানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত থাকলেও এর উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এই দুই স্থানে এবার পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
দুই সিটির সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দরপত্র গৃহীত হওয়ার ৩ দিনের মধ্যে জামানত ব্যতীত অবশিষ্ট অর্থ, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর, ১০ শতাংশ আয়কর, নির্ধারিত হারে পরিচ্ছন্ন ফি সিটি কর্পোরেশনে পরিশোধ করে কার্যাদেশ গ্রহণ করতে হবে।
কোরবানির জন্য এই ১৯টি অস্থায়ী হাট ছাড়াও উত্তর সিটি এলাকায় গাবতলী পশুর হাট ও দক্ষিণ সিটি এলাকায় সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাটেও কোরবানির পশু বেচাকেনা চলবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: