অন্তর্বর্তী সরকারের ২য় অধ্যায়, প্রধান কাজ সুষ্ঠু নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৭ আগস্ট ২০২৫ ১৭:৫১

ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত

একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ করে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের শুরুতে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, ‘সভার শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে ৫ আগস্ট আমার প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। আজ থেকে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে। এখন আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা।’

আগামী নির্বাচন ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা আরও দুটি চলমান বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন- সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া এবং চলমান বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা। শফিকুল আলম বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. আলী রীয়াজ শিগগিরই এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংস্কার কর্মসূচির হালনাগাদ তথ্য জানাবেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম চলমান বিচারসংক্রান্ত অগ্রগতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে থাকবেন।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, সরকার পুলিশ সদর দপ্তরকে স্বচ্ছভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে এবং নিয়মিত পরিসংখ্যানসহ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করতে বলেছে। ‘পুলিশ সদর দপ্তরের প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে- এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না,’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন প্রেস সচিব।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ সদর দপ্তর পুরোপুরি স্বচ্ছভাবে কাজ করছে এবং তারা প্রতি মাসে অপরাধ পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে। আমি আপনাদের অনুরোধ করব জুলাই মাসের পরিসংখ্যান দেখে নিতে। ‘প্রশাসন ভেঙে পড়েছে- এমন দাবিও ঠিক নয়, বরং প্রশাসন সচল না থাকলে বিগত মাসগুলোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সম্ভব হতো না।’

প্রধান উপদেষ্টা তার মঙ্গলবারের টেলিভিশন ভাষণে বলেন, জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া দৃঢ় গতিতে এগোচ্ছে। বিচার কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক শুনানি পর্বও শুরু হয়েছে। ইতিহাসের ভয়াবহ গণহত্যায় জড়িতদের এ দেশের মাটিতেই বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তিনি বলেন, বিচারপ্রক্রিয়া ও এর ফলাফল ধাপে ধাপে জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। ন্যায়বিচারের পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ এবং জনগণের চোখের সামনে দৃশ্যমান রাখা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বুধবার নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠিয়ে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির রমজানের আগেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বলেছে। এই চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সরকারের অনুরোধের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের কাছে পাঠানো চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যাশিত মানের ‘অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর’ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান।

এই পদক্ষেপটি এসেছে অধ্যাপক ইউনুসের ৫ আগস্ট ‘গণঅভ্যুত্থান দিবসে’ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের পরদিন। ওই ভাষণে তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন আয়োজনের অনুরোধ জানাবে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন আয়োজনের যাবতীয় প্রস্তুতি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা অবিলম্বে শুরু করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি এমন একটি নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন, যা বিগত ১৫ বছরে ভোট দিতে না পারা নাগরিকদের জন্য একটি আনন্দময় ও উৎসবমুখর দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি নির্বাচন কমিশনকে আশ্বাস দেন, সরকার নির্বাচনের প্রত্যাশিত ‘সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর’ আয়োজনের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: