ছবি : সংগৃহীত
                                    গণতান্ত্রিক চর্চার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। এটি আমাদের দেশে বজায় রাখতে হবে এবং আরও দৃঢ় করতে হবে। দেশি-বিদেশি প্রায় ১ হাজার গণমাধ্যমকর্মীদের অংশগ্রহণে শনিবার কুয়ালালামপুরের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাংবাদিক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত হাওয়ানা ২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এসব কথা বলেছেন।
দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা বারনামা জনিয়েছে, "গণমাধ্যমের কাজ সত্য তুলে ধরা। এটা যেন শুধুমাত্র কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাতিয়ার হয়ে না পড়ে, যারা মানুষের চিন্তা-ভাবনায় একমুখী ধারণা চাপিয়ে দিতে চায়, মতের ভিন্নতার কোনো সুযোগ না রেখে। এই ব্যবস্থাটা গণতন্ত্রে অটুট থাকতে হবে। এর একটি মূলভিত্তি হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা।"
আনোয়ার ইব্রাহিম আরও বলেন, “নোয়াম চমস্কির মতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও আসে- যেমন ‘ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট’ বা সম্মতি তৈরি করার প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, শক্তির উপকরণ ব্যবহার করে এমন এক বয়ান তৈরি করা হয়, যা মানুষকে না চাইলেও মেনে নিতে বাধ্য করে।”
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, "আপনাদের অবশ্যই পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং সমাজকে তথ্যজ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা গুজব, অপপ্রচার বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তিতে সহজে না পড়ে।"
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে আরো বলেন, “আপনারা যেন ‘ভিন্নমত তৈরির শিকার না হন-অর্থাৎ যারা ঘৃণা, অপমান ও অপবাদ ছড়িয়ে অন্যের চরিত্রহনন করে বিশেষ স্বার্থ হাসিল করতে চায়। মতপার্থক্য গ্রহণযোগ্য, কিন্তু মানুষকে অপমান করা, মিথ্যা প্রচার চালানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেমনটা টমাস জেফারসন বলেছিলেন-গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরতন্ত্র মেনে নেওয়া যায় না, তেমনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের দমনও নয়।"
গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ভারসাম্যর বিষয়ে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ভারসাম্য থাকতে হবে। শাসক গোষ্ঠী, জাতিগত উগ্রবাদী কিংবা ক্ষমতালোভী গোষ্ঠীর ‘ভিন্নমত তৈরির হাত থেকে যেন সমাজ মুক্ত থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। আজকের বাস্তবতায় চ্যালেঞ্জ কেবল মূলধারার গণমাধ্যম নয়- বড় চ্যালেঞ্জ এখন সামাজিক মাধ্যমে। কারণ এটি অনেক বেশি মুক্ত, দ্রুত ও অনিয়ন্ত্রিত। আমাদের এখনকার মূল চ্যালেঞ্জ হলো-এই স্বাধীনতাকে কীভাবে সর্বোচ্চ ভালো কাজে লাগানো যায়। তথ্য যেন নির্ভরযোগ্য হয়, সত্যভিত্তিক হয় এবং কোনোমতেই যেন নিপীড়নের হাতিয়ার না হয়, তা যত শাসকশ্রেণিই হোক কিংবা ক্ষমতার আশায় মরিয়া কোনো গোষ্ঠী।"
তিন দিনব্যাপী দেশি-বিদেশি প্রায় ১ হাজার গণমাধ্যমকর্মী অংশগ্রহণে এবারের হাওয়ানা সম্মেলনের ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো- সাংবাদিকতার নতুন যুগে প্রবেশ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আলিঙ্গন, নৈতিকতা রক্ষা।
উল্লেখ্য যে, এবারের হাওয়ানা সম্মেলনে, মালয়েশিয়ায় মে মাসের ২৯ তারিখকে ‘জাতীয় সাংবাদিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখা হয়েছে ১৯৩৯ সালের ২৯ মে প্রথম ‘উতুসান মেলায়ু’ পত্রিকার প্রকাশের ঐতিহাসিক দিন হিসেবে। এর মাধ্যমে গণমাধ্যম অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সব সাংবাদিক ও কর্মীদের অবদানকে সম্মান জানানো হচ্ছে।
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: