12/18/2025 বিশ বছরের মধ্যে ইউরোপ অযোগ্য হয়ে যাবে: ট্রাম্প প্রশাসন
মুনা নিউজ ডেস্ক
৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:১৮
২০ বছর বা এরও কম সময়ের মধ্যে ইউরোপ চেনার অযোগ্য হয়ে যাবে মনে করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন দেশেরর জন্য একটি নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রস্তুত করেছে।
নভেম্বর মাসে প্রকাশিত ৩৩ পৃষ্ঠার এক নথিতে ‘‘বিশ্ব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি’’ তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে ইউরোপ সম্পর্কে এমন দৃষ্টিভঙ্গি উঠে আসে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য কীভাবে সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করা হবে, সে বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদন জানিয়েছে, নতুন এই কৌশলে সতর্ক করা হয়েছে, ইউরোপ ‘‘সভ্যতাগত বিলুপ্তির’’ মুখোমুখি। আগামী ২০ বছরের মধ্যে ইউরোপের ‘‘সভ্যতাগতভাবে ধ্বংসের বাস্তব এবং আরও স্পষ্ট সম্ভাবনা’’ রয়েছে, যা যুক্তরাষ্টকে ‘হতবাক’ করে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় কিছু দেশ নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে থাকবে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কৌশলগত নথিতে ইউরোপ মহাদেশের ওপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন পশ্চিমাদের আসন্ন ‘বিপর্যয়ের’ জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অভিবাসনকে দায়ী করছেন।
নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউরোপের মুখোমুখি বৃহত্তর সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো, ইইউ এবং অন্যান্য বহুজাতিক সংস্থার কার্যকলাপ। এগুলো রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করে। অভিবাসন নীতি মহাদেশটিতে সংঘাত সৃষ্টি করছে। বাকস্বাধীনতার ওপর সেন্সরশিপ ও রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন, জন্মহার হ্রাস ও জাতীয় পরিচয় এবং আত্মবিশ্বাস হ্রাস পেয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এই কৌশলগত নথিকে একটি “রোডম্যাপ” হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এর লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে সফল জাতি হিসেবে ধরে রাখা।
এই নথি প্রকাশের পর ইউরোপের রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াদেফুল বলেন, ‘বাইরের কোন উপদেশের প্রয়োজন নেই জার্মানির।’
সাধারণভাবে প্রতিটি প্রেসিডেন্টের মেয়াদে একবার করে জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রকাশ করা হয়, যা ভবিষ্যৎ নীতি ও বাজেট তৈরির একটি কাঠামো নির্ধারণ করে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রেসিডেন্টের অগ্রাধিকারগুলো স্পষ্ট করে।
এই নতুন নথি ট্রাম্পের চলতি বছরের জাতিসংঘে দেয়া বক্তব্যের সঙ্গেও মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে তিনি পশ্চিম ইউরোপের অভিবাসন নীতি ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির কৌশল নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন।
ইউরোপ প্রসঙ্গে নথিতে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ২০ বছর বা এরও কম সময়ের মধ্যে ইউরোপ চেনার অযোগ্য হয়ে যাবে এবং মহাদেশটির অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো ভবিষ্যতে আরও বড় হবে। আর তা হবে সভ্যতাগত বিলুপ্তির কারণে।
নথিতে আরও বলা হয়, কিছু ইউরোপীয় দেশের অর্থনীতি ও সামরিক শক্তি ভবিষ্যতে এতটা শক্তিশালী থাকবে কি না, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে টিকে থাকতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য ট্রান্সন্যাশনাল সংস্থার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে যে, তারা রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব দুর্বল করছে। একইসঙ্গে এতে আরও বলা হয়েছে, ইউরোপের অভিবাসন নীতিগুলো সংঘাত সৃষ্টি করছে এবং সেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস, রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন, জন্মহার কমে যাওয়া, জাতীয় পরিচয় ও আত্মবিশ্বাসের ক্ষয়, এসব সমস্যাও বিদ্যমান। তবে ইউরোপের দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থানকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে নথিতে।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াদেফুল পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো জোটে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে এই জোট মূলত নিরাপত্তা নীতির বিষয়েই নিবদ্ধ। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা আমাদের মুক্ত সমাজের কাঠামো কেমন হবে, এ ধরনের বিষয় এই কৌশলগত নথিতে যুক্ত হওয়া উচিত নয়, অন্তত জার্মানির ক্ষেত্রে তো নয়ই।’
রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের বিষয়টি উল্লেখ করে নথিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইউরোপের মধ্যে “আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি” রয়েছে। ইউরোপ ও রাশিয়ার সম্পর্ক ব্যবস্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন এবং ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান যুক্তরাষ্ট্রের মূল জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে জড়িত বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.