12/31/2025 প্রকাশ্যে এলেন হাদির খুনি, এআই ভিডিও নয় দাবি দ্য ডিসেন্ট-এর
মুনা নিউজ ডেস্ক
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:১৫
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তিনি হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। তবে তার বিভিন্ন দাবির সত্যতা নিয়ে তৈরি হওয়া জনমনে কৌতূহল ও বিভ্রান্তি পর্যালোচনা করে ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান ‘দ্য ডিসেন্ট’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ভিডিওটি যাচাই করে দেখা গেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি নয়। ভিডিওতে দৃশ্যমান ফয়সালের চেহারা, মুখভঙ্গি ইত্যাদি ফয়সাল করিমের বাস্তব চেহারা এবং মুখভঙ্গির সঙ্গে পুরোপুরি সাযুজ্যপূর্ণ। ডিজিটাল অনুসন্ধানমূলক সংবাদমাধ্যম দ্য ডিসেন্ট বুধবার তাদের ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানিয়েছে।
ভিডিওতে ফয়সাল দাবি করেন, তিনি বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তবে শুধু ভিডিওর মাধ্যমে তার ভৌগোলিক অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া নিজের দাবির পক্ষে তিনি কোনো প্রামাণ্য তথ্য- যেমন লোকেশন ডেটা বা পাসপোর্টের সিল উপস্থাপন করেননি।
‘দ্য ডিসেন্ট’ নিশ্চিত করে যে, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা তৈরি নয়। ‘দ্য ডিসেন্ট’ ফয়সাল করিমের বাস্তব চেহারা ও মুখভঙ্গির সঙ্গে ভিডিওর দৃশ্যের পূর্ণ সাযুজ্য পেয়েছে। এছাড়া ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ বিশ্লেষণ এবং চারটি নির্ভরযোগ্য এআই যাচাই টুল ব্যবহার করে ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ভিডিওর কিছু ফ্রেমে ফয়সালের থুতনির দাড়ি অদৃশ্য হওয়া প্রসঙ্গে ‘দ্য ডিসেন্ট’ বলছে, এটি ভিডিও রেকর্ড করার সময় ব্যবহৃত কোনো ‘ফিল্টার’-এর প্রভাব। এই কারিগরি ত্রুটি পুরো ভিডিওকে এআই-সৃষ্ট প্রমাণ করে না।
ভিডিওতে ফয়সাল নিজেকে বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থানকারী বলে দাবি করেন। তবে ‘দ্য ডিসেন্ট’ বলছে, কেবল এই ভিডিওর মাধ্যমে তার ভৌগোলিক অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ফয়সাল তার দাবির স্বপক্ষে মৌখিক বক্তব্য ছাড়া অন্য কোনো প্রমাণ (যেমন- লোকেশন বা পাসপোর্ড সিল) উপস্থাপন করেনি।
তিনি দাবি করেন, হাদিকে হত্যার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে তিনি ছিলেন না। ‘দ্য ডিসেন্ট’ এই দাবিকে সরাসরি ‘মিথ্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির আগের বিশ্লেষণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, মোটরসাইকেলের পেছনে বসে ফয়সাল করিমই গুলি চালিয়েছিলেন এবং চালকের আসনে ছিলেন তার সহযোগী আলমগীর শেখ। দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোতেও এই তথ্য প্রমাণসহ প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়া ফয়সাল ভিডিওতে অভিযোগ করেন, ওসমান হাদি তাকে মন্ত্রণালয় থেকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে অগ্রিম ৫ লাখ টাকা নিয়েছিল। তবে হাদির মৃত্যুর পর এ দাবির কোনো সত্যতা মেলেনি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাদি জীবিত থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্যের কোনো অভিযোগ ছিল না। বরং তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
গত ১২ ডিসেম্বর পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডে হামলার শিকার হন শরিফ ওসমান হাদি। মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেল থেকে গুলি চালানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১৫ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।
হত্যাকাণ্ডের ১৮ দিন পর রোববার ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এসএন নজরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ধারণা করা হচ্ছে আসামিরা অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে প্রবেশ করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ছয়জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং চারজন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.