05/15/2025 শুল্কনীতি আমেরিকার অর্থনীতিতে পাল্টা আঘাত করবে: মাহাথির মোহাম্মদ
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৪৮
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক আরোপিত শুল্কের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘এই পদক্ষেপ তাদের দেশটির অর্থনীতিকেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’ তিনি মনে করেন, ‘ডনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসনের এই নীতি তাদের বাণিজ্য অংশীদারদের চেয়েও আমেরিকার জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।’
ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মাহাথির বলেন, ‘প্রায় ৬০টি দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ থেকে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ফলে আমেরিকায় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। এর ফলস্বরূপ, দেশটির সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, আমরা প্রায়ই মালয়েশিয়া ও অন্যান্য বাণিজ্য সহযোগীদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করি। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো, আমেরিকার কী হবে? তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকার সমস্ত পণ্যের দাম বাড়বে এবং তারা উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়ে ভুগবে। তখন তাদের শ্রমিকরা আরও বেশি বেতন দাবি করবে। ফলে তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না।’
ড. মাহাথির মাইক্রোচিপের বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মাইক্রোচিপের জন্য কোরিয়া, তাইওয়ান ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের ওপর নির্ভরশীল। এই শুল্ক আরোপের কারণে উৎপাদন খরচ বাড়বে এবং আমেরিকান পণ্য আরও দামি হয়ে উঠবে।’
বিমান শিল্পের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার মতো দেশ সহজেই আমেরিকান বোয়িংয়ের পরিবর্তে ইউরোপীয় এয়ারবাস কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘ধরুন, আমরা যদি ৩০টি বোয়িংয়ের বদলে ৩০টি এয়ারবাস কিনি। প্রতিটি বোয়িংয়ের দাম প্রায় ৫০০ মিলিয়ন রিঙ্গিত। ৫০০ মিলিয়নকে ৩০ দিয়ে গুণ করলে যা হয়, আমেরিকা সেই পরিমাণ অর্থ হারাবে।’
গত সপ্তাহে ড. মাহাথির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে, আগামী তিন মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের এই শুল্কনীতি স্থগিত করতে বাধ্য হবে, কারণ এই পদক্ষেপ তাদের নিজেদের অর্থনীতিকেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যুক্তরাষ্ট্র মালয়েশিয়ার অধিকাংশ পণ্যের ওপর ২৪ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছে।
এছাড়া, প্রায় ৬০টি দেশের পণ্যের ওপর বিভিন্ন হারে শুল্ক এবং সাধারণভাবে সকল দেশের আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে, বাণিজ্য আলোচনার সুযোগ দেয়ার জন্য এই শুল্ক আপাতত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।
ড. মাহাথির বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেই তাদের দেশকে ‘বিশ্ব’ মনে করে এবং অন্যান্য দেশ সম্পর্কে তারা প্রায় কিছুই জানে না। এমনকি মার্কিন রাষ্ট্রপতিও বিশ্বের বাকি অংশ সম্পর্কে অবগত নন। সম্ভবত সে কারণেই তিনি অন্যান্য দেশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন।’’
সম্প্রতি, মার্কিন রক্ষণশীল ভাষ্যকার বিল ও’রিলি মালয়েশিয়ার জনগণের চীনা পণ্য কেনার সামর্থ্য নেই বলে মন্তব্য করলে মালয়েশিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও’রিলিকে ‘ঔপনিবেশিক’ মানসিকতার অধিকারী বলে অভিহিত করেন। এরপর ও’রিলি আনোয়ারকে উপহাস করেন এবং মালয়েশিয়ার কম মাথাপিছু আয় (৫,৭৩১ মার্কিন ডলার) উল্লেখ করে তার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
তবে, মালয়েশিয়ার যোগাযোগ মন্ত্রী ফাহমি ফাদজিল ও’রিলির এ তথ্যকে ভুল আখ্যায়িত করে বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের তথ্য তুলে ধরেন। সেই তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার মাথাপিছু জিডিপি ১১ হাজার ৩৭৯ মার্কিন ডলার এবং ক্রয়ক্ষমতার সমতা অনুযায়ী ৩৬ হাজার ৪১৬ মার্কিন ডলার, যা দেশটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃত।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.