05/04/2025 "আমেরিকান-ধাঁচের রাজনীতি" নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ায় পুনর্নির্বাচিত হলেন অ্যালবানিজ
মুনা নিউজ ডেস্ক
৩ মে ২০২৫ ২০:৪৯
শনিবার নাটকীয় প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে জয় পেয়েছেন অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। একসময় পুনরুজ্জীবিত রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে এই ঐতিহাসিক বিজয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ভোটারদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ।
রক্ষণশীল লিবারেল পার্টির নেতা পিটার ডাটন পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন এবং নিজ আসনটিও হারিয়েছেন, যা কানাডার রক্ষণশীল নেতা ও দলের পরিণতির সঙ্গে মিল রয়েছে। সেখানেও নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য ট্রাম্পবিরোধী প্রতিক্রিয়াকে দায়ী করা হয়েছিল।
সিডনিতে এদিন লেবার পার্টির বিজয়োৎসবে সমর্থকরা উল্লাস ও আবেগে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। সেখানে অ্যালবানিজ বলেন, তার দল পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে।
তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের সরকার অস্ট্রেলীয় পথ বেছে নেবে। কারণ আমরা গর্বিত—আমাদের পরিচয় ও আমরা এ দেশে যা কিছু একসঙ্গে গড়েছি, তার জন্য।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের অন্য কোথাও গিয়ে অনুপ্রেরণা খুঁজতে হবে না। আমরা তা খুঁজে পাই আমাদের মূল্যবোধে, আমাদের মানুষজনেই।’
অ্যালবানিজ হচ্ছেন গত দুই দশকে প্রথম অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি পরপর দুই মেয়াদে জিতলেন। তিনি বলেন, অস্ট্রেলীয়রা ন্যায্যতার পক্ষে রায় দিয়েছেন এবং ‘প্রতিকূলতার মুখেও সাহস দেখানোর শক্তি ও বিপন্নদের প্রতি সদয় হওয়ার মনোভাবের’ পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ান ইলেকটোরাল কমিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ৬৮ শতাংশ ভোট গণনা শেষে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ১৫০টি আসনের মধ্যে লেবার পার্টি ৮১টি আসনে জয়লাভ করেছে, যা পার্লামেন্টে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আরো জোরালো করেছে।
ডাটনের লিবারেল পার্টি ফেব্রুয়ারিতেও জনমত জরিপে এগিয়ে ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনায় জর্জরিত হয়। তিনি টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেন, তিনি অ্যালবানিজেকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘এই প্রচারণায় আমরা যথেষ্ট ভালো করতে পারিনি। আজকের রাতে তা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং আমি এর পুরো দায় নিচ্ছি।’
অপরাধ ও অভিবাসন বিষয়ে কঠোর মনোভাবের জন্য পরিচিত সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তিনি ডিকসন আসনে লেবার পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তার সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি এই আসনটি টানা দুই দশক ধরে দখলে রেখেছিলেন।
ডাটন দলের পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘এই নির্বাচনে আমাদের বিরোধীরা আমাদের যেভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে, সেটাই আমাদের প্রকৃত পরিচয় নয়।’
ট্রাম্প তুলনার প্রভাব
এদিকে জনমত জরিপগুলোতে দেখা গেছে, জীবনযাপনের ব্যয়বৃদ্ধি ও ট্রাম্পের অনিশ্চিত নীতিগুলো নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগ প্রধান ইস্যুগুলোর মধ্যে ছিল।
উত্তর টেরিটরির লিবারেল সিনেটর জাসিন্তা প্রাইস বলেন, ‘আপনারা ট্রাম্পকে ঘিরে যত কাদা ছুড়েছেন, তার কিছু না কিছু তো লেগেছেই।’ তার ‘মেক অস্ট্রেলিয়া গ্রেট এগেইন’ মন্তব্য ট্রাম্পের বিখ্যাত স্লোগানের সঙ্গে তুলনা টেনে আনে।
তিনি আরো বলেন, ‘আপনারাই সব কিছু ট্রাম্পকে ঘিরে বানিয়ে ফেলেছেন।’ ডাটন তাকে সরকারে দক্ষতা বৃদ্ধির একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা ট্রাম্পের কিছু নীতির অনুরূপ ছিল।
তিনি আরো বলেন, ‘পিটার ডাটনের হারটা বিরাট ক্ষতি।’
লিবারেল পার্টির মুখপাত্র সিনেটর জেমস প্যাটারসন রক্ষণশীলদের প্রচারণার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘ট্রাম্প ফ্যাক্টর’ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘কানাডায় রক্ষণশীলদের জন্য এটা ধ্বংসাত্মক ছিল...আমার মনে হয়, অস্ট্রেলিয়াতেও এটা একটা বড় বিষয় ছিল। এর কতটা প্রভাব পড়েছে, সেটা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বোঝা যাবে।’
এর আগে ভোট গণনা শুরুর সময় লেবার ট্রেজারার জিম চ্যালমার্স বলেন, ২০২৪ সালের শেষ দিকে সরকার যখন ‘সর্বনাশের’ পথে ছিল, তখন অ্যালবানিজের শক্তিশালী প্রচারণা, খরচের সমস্যা সমাধানে কার্যকর নীতি ও ট্রাম্প ফ্যাক্টরের জন্য তারা আবার প্রতিযোগিতায় ফিরে আসতে পেরেছে।
তিনি বলেন, এই জয় ‘ঐতিহাসিক এক বিজয়’ এবং অ্যালবানিজ ‘অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান চালুর পর থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সাফল্যগুলোর একটি অর্জন করেছেন’।
সিডনির লেবার পার্টির নির্বাচনী অনুষ্ঠানে থাকা ৫৪ বছর বয়সী সমর্থক মেলিন্ডা অ্যাডারলি চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ‘এই ফলাফল একেবারেই অবিশ্বাস্য।’
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.