মুহুর্মূহু হামলায় রাতের অন্ধকার আকাশ প্রজ্জলিত। ইসরাইল এবং ইরান থেকে পাল্টাপাল্টি হামলা আরও জোরালো হয়েছে। রোববার রাতভর ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম রোববার নিশ্চিত করেছে যে, তাদের ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি, তার ডেপুটি হাসান মোহাকিকসহ মোট তিনজন জেনারেল নিহত হয়েছেন ইসরাইলের হামলায়।

রোববার দিবাগত রাতে এবং সোমবার সকালে ইরানে আরও জোরালো হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ইরানের হামলায় ইসরাইলের তেল আবিব এবং জেরুজালেমে বিস্ফোরণ হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে ইসরাইলে হামলা বৃদ্ধি করেছে ইরান। তবে ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে ইরানেই বেশি হয়েছে।

অনলাইন আল জাজিরা বলছে, এই যুদ্ধে এরই মধ্যে ইরানে নিহতের সংখ্যা পৌঁছে গেছে ২২৪-এ। এর মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ৭০। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ইসরাইল যদি হামলা বন্ধ করে তবেই ইরানের জবাব বন্ধ হবে।

ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, ইরান ও ইসরাইল একটি চুক্তিতে আসবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ইসরাইলের প্রতিরক্ষাকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে যাবে ওয়াশিংটন। টাইমস অব ইসরাইল বলছে, তারা ইরানের আরও গভীরে হামলা চালিয়েছে, তেহরানের পথে ‘এয়ার করিডোর’ খুলেছে। রোববার ইরানের ডজনখানেক স্থানে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে তারা। এর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি কেন্দ্র, রাডার সিস্টেম, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও এর লঞ্চার।

একই সঙ্গে ইরানের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে। ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ইরানি জ্বালানি সরবরাহকারী বিমানকেও বোমা হামলার মাধ্যমে ধ্বংস করেছে। এটি ইসরাইল থেকে প্রায় ২৩০০ কিলোমিটার (১৪৩০ মাইল) দূরে অবস্থিত। এটিই এই অপারেশনে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দূরবর্তী হামলা বলে উল্লেখ করেছে আইডিএফ।

সোমবার ভোরে আইডিএফ জানায়, তারা ইরানের মধ্যাঞ্চলে ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। এর আগে ইসরাইলি নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রের কাছে থাকতে বলা হয়। আইডিএফ জানিয়েছে, তারা শুক্রবার থেকেই ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা সফল হচ্ছে না। ইরানের হামলায় ইসরাইলেও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

আইডিএফ প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির রোববার সন্ধ্যায় এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ইতিহাসে এই অভিযান এর আগে আর কখনো দেখা যায়নি। এর লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের সেই অস্তিত্বগত হুমকিকে ধ্বংস করা, যা তারা আমাদের ধ্বংস করার জন্য বছরের পর বছর ধরে তৈরি করছিল । তিনি আরও বলেন, আমরা পরিকল্পিত, পেশাদার এবং বিবর্তনশীল একটি কৌশল অনুসরণ করছি। ২৪ ঘণ্টায় আমরা তেহরানের পথে একটি আকাশ করিডোর খুলেছি।

বিমানবাহিনীর পাইলটরা ইসরাইলি ভূখণ্ড থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে চরম ঝুঁকি নিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে হামলা চালাচ্ছেন। একইসাথে আমাদের ভূখণ্ডে তারা হামলা চালাতে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ব্যবহার করেছে, তা চিহ্নিত করে ধ্বংস করছি।

এক বিবৃতিতে জামির জানান, বিমানবাহিনী ইরানের পরিকাঠামো এবং পারমাণবিক কর্মসূচিতে এমনভাবে হামলা চালাচ্ছে, যা শত্রু কল্পনাও করেনি। রোববার বিকেলে ইরানের রাজধানী তেহরানে ব্যাপক বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে, এবং শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন ভিডিও। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, তেহরানে বড় ধরনের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন পাইপে বিস্ফোরণ হয়েছে। ইসরাইলি হামলার সঙ্গে এ ঘটনা সম্পর্কযুক্ত বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আইডিএফ কোনো মন্তব্য করেনি।

শিরাজ শহরেও ইরানি সামরিক স্থাপনাগুলিতে হামলার খবর এসেছে। আইডিএফ বলেছে, তারা ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে ডজনখানেক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে। রোববার রাতে ইরানি গণমাধ্যম পারচিন এলাকায় ইসরাইলি হামলার কথা জানায়।

মেহর নিউজ এজেন্সি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় ওই এলাকায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়েছে। অক্টোবরে ইসরাইল পারচিনের একটি সক্রিয় পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ধ্বংস করে বলে জানা যায়, যা ইরানের আগের ব্যালিস্টিক হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়া ছিল।

মাশহাদ বিমানবন্দরে হামলাকে ইসরাইলি বিমানবাহিনীর ইতিহাসে সবচেয়ে দূরবর্তী আক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ১৯৮৫ সালে তিউনিসিয়ায় পিএলও সদর দপ্তরে হামলার ঘটনাটিও ২০০০ কিমি দূরে হয়েছিল।