গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ভিডিও নেটওয়ার্কগুলো যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে। এগুলো ঐতিহ্যবাহী টিভি চ্যানেল এবং সংবাদ ওয়েবসাইটগুলোর জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে গেছে। রয়টার্স ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, অর্ধেকেরও বেশি (৫৪%) মানুষ ফেসবুক, এক্স এবং ইউটিউবের মতো নেটওয়ার্ক থেকে সংবাদ সংগ্রহ করেন- যা টিভি (৫০%) ,নিউজ সাইট এবং অ্যাপ (৪৮%) কে ছাড়িয়ে গেছে।

একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্যক্তিত্ব-ভিত্তিক সংবাদের উত্থান কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, অন্যান্য দেশেও এই পরিবর্তন দ্রুত প্রভাব ফেলেছে।

পডকাস্টার জো রোগান সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২২%) বলেছে যে, তারা আগের সপ্তাহে তার কাছ থেকে খবর সংগ্রহ করেছেন। প্রতিবেদনের লেখক নিক নিউম্যান বলেছেন, সামাজিক ভিডিও এবং ব্যক্তিত্ব-ভিত্তিক সংবাদের উত্থান ঐতিহ্যবাহী প্রকাশকদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

রয়টার্স ইনস্টিটিউট জানাচ্ছে, কিছু রাজনীতিবিদদের মধ্যে মূলধারার সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণের পরিবর্তে অনলাইন হোস্টদের সময় দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদরা ঐতিহ্যবাহী সাংবাদিকতাকে এড়িয়ে পক্ষপাতদুষ্ট মিডিয়া, ব্যক্তিত্ব বা ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন, যারা খুব কমই কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। সেইসঙ্গে এদের অনেকেই মিথ্যা বর্ণনা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার সাথে সম্পৃক্ত।

জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও, বিশ্বব্যাপী প্রায় অর্ধেক মানুষ (৪৭%) অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার এবং ব্যক্তিত্বদের মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রধান উৎস হিসেবে উল্লেখ করেছেন- যা তাদের রাজনীতিবিদদের সমতুল্য করে তুলেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, সংবাদের জন্য এক্স -এর ব্যবহার ক্রমবর্ধমান, যুক্তরাষ্ট্রে এটির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। ২০২২ সালে ইলন মাস্ক নেটওয়ার্কটি নিয়ন্ত্রণে নেবার পর থেকে, অনেক বেশি ডানপন্থী মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা, নেটওয়ার্কটিতে ভিড় জমাচ্ছে।

অন্যদিকে কিছু প্রগতিশীল দর্শক এটি ছেড়ে চলে গেছে অথবা কম ব্যবহার করছে। মাস্কের টুইটারে ক্ষমতা গ্রহণের পর যারা নিজেদেরকে ডানপন্থী বলে পরিচয় দিত তাদের অনুপাত তিনগুণ বেড়েছে।

যুক্তরাজ্যে, ডানপন্থী এক্স দর্শক প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অন্যদিকে থ্রেডস, ব্লুস্কি এবং মাস্টোডনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী নেটওয়ার্কগুলো বিশ্বব্যাপী খুব কম প্রভাব ফেলছে, সংবাদের ক্ষেত্রে মাত্র ২%।

সংবাদ উৎস সম্পর্কে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

টিকটক হল সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল সামাজিক এবং ভিডিও নেটওয়ার্ক, যা বিশ্বজুড়ে ১৭% মানুষ সংবাদের জন্য ব্যবহার করে। গত বছরের তুলনায় এর ব্যবহার চার শতাংশ বেড়েছে।

খবর সংগ্রহ করতে এআই চ্যাটবটের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং সমগ্র জনসংখ্যার তুলনায় ২৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এটি দ্বিগুণ জনপ্রিয়। তবে বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবাদকে কম স্বচ্ছ, নির্ভুল এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে।

সমস্ত প্রজন্ম এখনও সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডগুলোর ওপর ভরসা রাখে, যাদের নির্ভুলতার একটি ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। ৪৮টি দেশের প্রায় ১০০,০০০ মানুষের উপর জরিপ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে রয়টার্স ইনস্টিটিউট ।