06/18/2025 ঘোড়ায় চড়ে হজ, স্পেন থেকে মক্কায় তারা তিনজন
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৭ জুন ২০২৫ ১৫:৩৫
স্পেনের তিনজন নাগরিক ঘোড়ার পিঠে চড়ে সৌদি আরবে গিয়ে পবিত্র হজ পালন করেছেন। এ যাত্রায় তাঁদের বহু চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে। সাত মাসের অক্লান্ত চেষ্টার পর তাঁরা সৌদি আরবে পৌঁছান। তাঁদের এই যাত্রার পেছনে রয়েছে চমকপ্রদ ঘটনা।
১৯৮৯ সালে সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আবদুল্লাহ রাফায়েল হারনান্দেজ। তিনি নির্ধারিত বিষয়ের বাইরেও পড়াশোনা শুরু করেন। বাইবেল পড়েন। স্প্যানিশ অভিধান পড়েন। একদিন পবিত্র কুরআনের পাতা ওল্টাতে গিয়ে আয়াতগুলো তাঁকে আকৃষ্ট করে। বিশেষ করে ভৌগোলিক বর্ণনা।
এ সময় হারনান্দেজ দুটি শপথ করেন। একটি হলো, পরীক্ষায় পাস করলে মুসলিম হবেন। অপরটি, ঘোড়ায় চেপে মক্কায় গিয়ে পবিত্র হজ পালন করবেন। যেমনটা আন্দালুসিয়ার মুসলিমরা করতেন। নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করার পর হারনান্দেজ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। নিজের নাম পরিবর্তন করে আবদুল্লাহ রাখেন। এরপর কেটে যায় প্রায় ৩৫ বছর। গত বছরের অক্টোবরে তিনি অবসরে যান। অবশেষে দ্বিতীয় ইচ্ছাটি পূরণের সিদ্ধান্ত নেন হারনান্দেজ।
একাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকের কিছু নথিতে মক্কা যাওয়ার পথে আন্দালুসিয়ার হজযাত্রীদের দীর্ঘ ও বিপৎসংকুল যাত্রার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। ওই সময় বেশির ভাগ হজযাত্রী জিব্রাল্টার প্রণালি পেরিয়ে উত্তর আফ্রিকায় পৌঁছাতেন। সেখান থেকে একটি নৌকায় করে মিসরের প্রধান বন্দর আলেকজান্দ্রিয়ায় যেতেন। সেখান থেকে কায়রো।এরপর কায়রোর বিভিন্ন জনপ্রিয় স্থান ও মসজিদ পরিদর্শন করতেন হজযাত্রীরা। কয়েক দিন পর কাফেলার সঙ্গে তাঁরা মক্কায় পৌঁছাতেন।
বর্তমানে এই পথে সৌদি আরবে যাওয়া নিরাপদ হবে না-এমনটা ভেবে হারনান্দেজ ও তাঁর সফরসঙ্গীরা দক্ষিণ ইউরোপ ঘুরে হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। স্পেনের হুয়েলভা প্রদেশের একটি ছোট শহর থেকে ঘোড়ার পিঠে চড়ে যাত্রা শুরু করেন। সঙ্গে যোগ দেন আবদেলকাদের হারকাসি ও তারেক রদ্রিগেজ।
স্পেন পার হওয়ার আগেই হজযাত্রীদের নিজেদের খাবার, ঘোড়ার খাবার ও সঙ্গে নেওয়া টাকাপয়সা শেষ হয়ে যায়। তখন এক ‘অলৌকিক ঘটনা’ ঘটে। নাভার এলাকার বুঞ্জুয়েল গ্রামে মরক্কোর একদল দিনমজুর মুসলিমের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় হয়। হজে যাওয়ার কথা শুনে তাঁরা প্রায় ১ হাজার ২০০ ইউরো দেন তাঁদের।
হারনান্দেজ বলেন, ফ্রান্স ও ইতালির মধ্যকার আল্পস পর্বতমালা পার হওয়ার সময় তাঁদের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। ওই সময় তীব্র শীত ও তুষারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল।
ইতালিতে পৌঁছানোর পর আরেকটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে। ভেরোনায় সৌদি ইনফ্লুয়েন্সার আবদেল রহমান আল-মুতিরির সঙ্গে দেখা হয় এই তিন স্প্যানিশ হজযাত্রীর। তাঁদের হজযাত্রার গল্প শুনে তিনি তাঁদের তাঁর সঙ্গে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তাঁরাও তাঁর প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করেন।
মুসলিম দর্শকদের মধ্যে সৌদি ইনফ্লুয়েন্সারের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি স্প্যানিশ হজযাত্রীদের গল্প অনলাইনে ছড়িয়ে দেন, যা পরবর্তী সময়ে তাঁদের যাত্রায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এরপর হজযাত্রীরা স্লোভেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়া পার হয়ে বসনিয়া ও সার্বিয়ায় প্রবেশ করেন। তবে নিয়মের কারণে নিজেদের ঘোড়া রেখে দিতে হয় সেখানে। তাঁরা সারায়েভোর একটি ঘোড়ার ক্লাব থেকে ঘোড়া নিয়ে যাত্রা শুরু করেন।
হারনান্দেজ বলেন, বসনিয়ায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় পৌঁছানোর পর তাঁরা নিজেদের জনপ্রিয়তা টের পান। এ কারণে সব জায়গায় উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন। সেখানে কোনো কিছুর অভাব হয়নি। সার্বিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সানজাক প্রদেশ ও রাজধানী নভি পাজারে মানুষ তাদের জুতা, জ্যাকেট ও ঘোড়ার জিনের মধ্যে নগদ অর্থ গুঁজে দিতেন।
বিধিনিষেধের কারণে হজযাত্রীদের গাড়িতে চড়ে বুলগেরিয়া পার হতে হয়। তবে তুরস্কে আবার তাঁরা ঘোড়ায় চড়ে যাত্রা চালিয়ে যান। হারনান্দেজ জানান, তাঁরা পবিত্র রমজান মাসে তুরস্কে প্রবেশ করেন। দেশটির যেখানেই গেছেন, সেখানকার পুলিশ, প্রতিবেশী ও স্থানীয় লোকজন ইফতারের জন্য খাবার দিয়ে তাদের সাহায্য করেছেন। হারনান্দেজ বলেন, ‘তুরস্কে প্রবেশের পর থেকে আমরা আর রান্না করিনি।’
এরপর তাঁরা সিরিয়া পান হন। বাশার আল-আসাদের পতনের তিন মাস পর সিরিয়া অতিক্রম করেন তাঁরা। সিরিয়ায় স্প্যানিশ হজযাত্রীদের স্বাগত জানান দেশটির নতুন সংস্কৃতিমন্ত্রী মোহাম্মদ সালেহ এবং তথ্যমন্ত্রী হামজা মুস্তাফা। সিরিয়ার পর জর্ডানের মরুভূমি পার হয়ে সৌদি আরবে ঢোকেন তিন স্প্যানিশ হজযাত্রী।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.