06/26/2025 বিমান বাহিনী সক্ষমতায় কোন কোন দেশ এগিয়ে : দেখুন সেরা ১০
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৫ জুন ২০২৫ ১৮:২৭
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র হামলা করেছে ইরানে। ইরানের নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটিস ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ভারী বাংকার বোমা ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। বোমা ফেলায় ব্যবহার করা হয়েছে ৭টি শক্তিশালী বি-২ বিমান। এরপরই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দেন। অথচ পুরো যুদ্ধটাই হয়েছে আকাশপথে। আক্রমণে মিসাইলের পাশাপাশি বিমান দিয়েও হামলা হয়েছে।
যুদ্ধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ কতটা শক্তিশালী, তা বোঝার জন্য এখন বিমানের সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশ তাদের আকাশসীমায় আধিপত্য ধরে রাখতে ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রয়েছে সুদক্ষ বিমানবাহিনী। চলো তাহলে জেনে নেওয়া যাক, বর্তমানে বিশ্বের সামরিক সক্ষমতায় কোন দেশের বিমানবাহিনী এগিয়ে রয়েছে। এই র্যাঙ্কিং করা হয়েছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্য এবং ২০২৫ সালে ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।
১. যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মোট ১৪ হাজার ৪৮৬টি সামরিক বিমান রয়েছে। সামরিক বিমান শক্তির দিক থেকে দেশটি বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদের বিমানবাহিনী (USAF), নৌবাহিনী (US Navy), মেরিন কর্পস (US Marine Corps) এবং সেনাবাহিনী (US Army) মিলে একটি বিশাল বিমানবহর পরিচালনা করে। এর মধ্যে এফ-৩৫ লাইটনিং ২ (F-35 Lightning II) ও এফ-২২ র্যাপ্টরের (F-22 Raptor) মতো অত্যাধুনিক ফাইটার জেট এবং বি-২ স্পিরিট (B-2 Spirit) ও বি-৫২ স্ট্র্যাটোফোর্ট্রেসের (B-52 Stratofortress) মতো বোমারু বিমান রয়েছে। বিশ্বের নানা স্থানে তাদের ঘাঁটি থাকায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে ও বিশ্বজুড়ে অভিযান পরিচালনা করার সক্ষমতা তাদের অতুলনীয় করে তুলেছে।
২. রাশিয়া
রাশিয়ার কাছে মোট ৪ হাজার ২৯২টি সামরিক বিমান রয়েছে। রাশিয়ার বিমানবাহিনী বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। তাদের বহরে টিইউ-১৬০ হোয়াইট সোয়ান-এর মতো শক্তিশালী বোমারু বিমান এবং এসইউ-৩৫, এসইউ-৫৭-এর মতো উন্নত কমব্যাট ফাইটার জেট রয়েছে। রুশ বিমানগুলো তাদের স্থায়িত্ব এবং কঠোর পরিস্থিতিতেও টিকে থাকার ক্ষমতার জন্য পরিচিত। তাদের বিমানবহর বিশাল দেশটির প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করে। তারাও বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষমতা প্রদর্শনে করতে সক্ষম।
৩. চীন
রাশিয়ার পরেই রয়েছে চীন। তাদের কাছে মোট ৩ হাজার ৩০৪টি সামরিক বিমান রয়েছে। চীনের বিমানবাহিনীর সক্ষমতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে চীন বড় ধরনের আধুনিকীকরণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাদের কাছে প্রচুরসংখ্যক উন্নত ফাইটার জেট, ড্রোন এবং মাল্টিরোল বিমান রয়েছে। নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে চীন তাদের বিমান সক্ষমতা দ্রুত উন্নত করছে।
৪. ভারত
ভারতের কাছে মোট ২ হাজার ২৯৬টি সামরিক বিমান রয়েছে। ভারতের বিমানবাহিনী দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এবং শক্তিশালী। তারা আধুনিক ফাইটার জেট এবং অন্যান্য সামরিক বিমানের সাহায্যে নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে ভারত তাদের বিমানশক্তিতে নিয়মিত বিনিয়োগ করে যাচ্ছে।
৫. জাপান
চীন ও ভারতের পরে রয়েছে জাপান। তাদের মোট সামরিক বিমান রয়েছে ১ হাজার ৪৫৯টি। জাপানের বিমান আত্মরক্ষা বাহিনী (JASDF) অত্যন্ত সুসজ্জিত এবং আধুনিক ফাইটার জেট ও নজরদারি বিমান দিয়ে গঠিত। আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও অংশীদারত্বে তাদের বিমানশক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। জাপান তাদের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিমান সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে।
৬. পাকিস্তান
এদিক থেকে পাকিস্তানও এগিয়ে। পাকিস্তানের কাছে মোট ১ হাজার ৪৩৪টি সামরিক বিমান আছে। পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম বিমানবাহিনী গড়ে তুলেছে। তাদের বিমানবহর প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধ উভয় ক্ষেত্রেই সক্ষম এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা সামরিক বিমানে বিনিয়োগ চালিয়ে যাচ্ছে।
৭. দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ১ হাজার ১৭১টি সামরিক বিমান রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটি শক্তিশালী বিমানবাহিনী তৈরি করেছে। তারা আধুনিকীকরণ এবং প্রযুক্তির উন্নতিতে বিশেষভাবে জোর দেয়।
৮. মিসর
মিসরের কাছে মোট ১ হাজার ৯৩টি সামরিক বিমান রয়েছে। মিসরের বিমানবাহিনী আফ্রিকার বৃহত্তম বিমানবাহিনী। তারা আধুনিক বিমান এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের সক্ষমতা বজায় রাখে, যা তাদের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৯. তুরস্ক
মিসরের পরেই রয়েছে তুরস্ক। তাদের বিমানবাহিনীতে মোট ১ হাজার ৬৯টি সামরিক বিমান রয়েছে। তুরস্কের বিমানবাহিনী ন্যাটোর অন্যতম শক্তিশালী সদস্য। তাদের বিমানবহরে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধবিমান এবং সহায়ক বিমান রয়েছে, যা তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা এবং আক্রমণাত্মক সক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।
১০. ফ্রান্স
সেরা দশে সবার শেষে রয়েছে ফ্রান্স। তাদের বিমানবাহিনীতে মোট ৯৭২টি সামরিক বিমান রয়েছে। ফ্রান্সের বিমানবাহিনী ইউরোপের অন্যতম উন্নত সামরিক বাহিনী। তাদের বহরে রাফাল জেটের মতো মাল্টিরোল ফাইটার জেট রয়েছে, যা তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা এবং আক্রমণের সক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।
এখন প্রশ্ন হলো, ইরান ও ইসরায়েলের বিমানবাহিনীতে কত বিমান আছে? উইকিপিডিয়া অনুসারে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী (BAF) প্রায় ২১৬টি বিমানের একটি বাহিনী রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিমান, পরিবহন বিমান এবং প্রশিক্ষণ বিমান।
বিমানসংখ্যার দিক দিয়ে ইরান সেরা ১০-এ না থাকলেও তাদের অবস্থান বিজনেস ইনসাইডারের ২০২৩ সালের র্যাঙ্কিং অনুসারে, ইরানি বিমানবাহিনী বিশ্বে ২২তম স্থানে রয়েছে। ২০২৫ সালের সামরিক শক্তি পর্যালোচনার দিক থেকে ১৪৫টি দেশের মধ্যে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারে ইরান ১৬তম অবস্থানে রয়েছে।
ইরানের কাছে মোট সামরিক বিমান রয়েছে প্রায় ৪০০ থেকে ৫৫০টি। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের ২০২৩ সালের তথ্য অনুসারে, তাদের সক্রিয় বিমানবহরে ৫৫০টির বেশি বিমান রয়েছে। তবে ওয়ার্ল্ড ডিরেক্টরি অব মডার্ন মিলিটারি এয়ারক্রাফটের (WDMMA) ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, তাদের সক্রিয় বিমানের সংখ্যা ৪০০।
অপরদিকে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী (IAF) মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত একটি বিমানবাহিনী। এদের মূল লক্ষ্য হলো ইসরায়েলের আকাশসীমা রক্ষা করা এবং প্রয়োজনে আক্রমণাত্মক অভিযান চালানো। ইসরায়েলের কাছে মোট সামরিক বিমান রয়েছে প্রায় ৬০০ থেকে ৬৫০টি। ওয়ার্ল্ড ডিরেক্টরি অব মডার্ন মিলিটারি এয়ারক্রাফটের ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, তাদের সক্রিয় বিমানবহরে ৬০৫টি বিমান রয়েছে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.