07/08/2025 ২০২৫ সাল নাগাদ বহুল ব্যবহৃত সেরা ১০টি সামাজিক মাধ্যম
মুনা নিউজ ডেস্ক
৭ জুলাই ২০২৫ ১৭:৫১
বর্তমান দুনিয়ায় দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা হোক বা ভিডিও দেখা, ছবি শেয়ার করা কিংবা ব্যবসার প্রসার- সব ক্ষেত্রেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ডেটা রিপোর্টালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২৫ এর এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত করা হিসাবে বিশ্বজুড়ে সক্রিয়ভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৫২৪ কোটি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে ফেসবুক। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তালিকাটি করতে গিয়ে ডেটা রিপোর্টাল দুই ধরনের তথ্য বিবেচনা করেছে। কারণ, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রকাশ করেছে আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন রিচ প্রকাশ করেছে। এর ভিত্তিতে করা ওই প্রতিবেদনের আলোকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ১০টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম-সম্পর্কিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
১. ফেসবুক
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। এর মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩০৭ কোটি। ২০০৪ সালে ফেসবুক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। ফেসবুকের নিজস্ব বিজ্ঞাপন পরিকল্পনার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল অন্তত ২২৮ কোটি। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, ওই সময় বিশ্বের ১৩ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের প্রায় ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশই ফেসবুক ব্যবহার করছিল।
২. ইউটিউব
সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তালিকায় ইউটিউবের অবস্থান দ্বিতীয়। তবে এ ক্ষেত্রে ইউটিউবের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাওয়া যায়নি। তাদের বিজ্ঞাপন রিচ প্রকাশ করা হয়েছে। গুগলের নিজস্ব টুলে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ইউটিউবের বিজ্ঞাপন ২৫৩ কোটি ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছেছিল। আর এপ্রিল নাগাদ করা হিসাব অনুযায়ী, ইউটিউবের সম্ভাব্য বিজ্ঞাপন রিচের সংখ্যা ২৫৪ কোটি। ২০০৫ সালে ইউটিউব প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফ্যাবেট ইনকরপোরেশন।
৩. হোয়াটসঅ্যাপ
তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছে হোয়াটসঅ্যাপ। হোয়াটসঅ্যাপের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা অন্তত ২০০ কোটি। হোয়াটসঅ্যাপের এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থা ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক ব্যবহারকারীদের জন্য গোপনীয়তা নিশ্চিত করে। সহজে বার্তা আদান-প্রদান করতে পারা এবং ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট পরিচালনার সুবিধার জন্য এটি বিশেষভাবে পরিচিত। ২০০৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ আত্মপ্রকাশ করেছে। এর মূল প্রতিষ্ঠান মেটা।
৪. ইনস্টাগ্রাম
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তালিকায় ইনস্টাগ্রামের অবস্থান চতুর্থ। এপ্রিল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, এই মাধ্যমের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি। একসময় শুধু সাধারণ ছবি শেয়ারিংয়ের অ্যাপ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল ইনস্টাগ্রাম। এখন এটি সারা বিশ্বের সৃজনশীলতা, ট্রেন্ড এবং ব্যবসার একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ভিজ্যুয়াল কনটেন্টের মাধ্যমে সংযোগ গড়ে তোলা বা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো ভাগ করে নেওয়ার জন্য ইনফ্লুয়েন্সার, ব্র্যান্ড ও সাধারণ ব্যবহারকারীদের এই অ্যাপ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইনস্টাগ্রামের নিজস্ব বিজ্ঞাপন পরিকল্পনার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে অন্তত ১৭৪ কোটি মানুষ ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করছিল। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, ওই সময় বিশ্বের ১৩ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের প্রায় ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতেন। ইনস্টাগ্রামের প্রতিষ্ঠাকাল ২০১০ সালের অক্টোবর। এটিরও মূল প্রতিষ্ঠান মেটা।
৫. টিকটক
তালিকার পঞ্চম অবস্থানে আছে টিকটক। এ ক্ষেত্রেও বিজ্ঞাপন রিচের হিসাব পাওয়া গেছে। মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর হিসাব পাওয়া যায়নি। ডেটা রিপোর্টালের তথ্য বলছে, এপ্রিল পর্যন্ত টিকটকের বিজ্ঞাপন প্রতি মাসে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী ১৮৪ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে। টিকটকের নিজস্ব বিজ্ঞাপন পরিকল্পনার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে টিকটক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল অন্তত ১৫৯ কোটি। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, তখন বিশ্বের ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের প্রায় ২৭ দশমিক ৫ শতাংশই টিকটক ব্যবহার করতেন। টিকটকের প্রতিষ্ঠাকাল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর। এর মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স।
৬. উইচ্যাট
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তালিকায় উইচ্যাটের অবস্থান ষষ্ঠ। এ মাধ্যমটির মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩৯ কোটি। উইচ্যাট হলো চীনের একটি বহুমুখী অ্যাপ। এটি দিয়ে একই সঙ্গে বার্তা আদান–প্রদান ও লেনদেন করা যায়। তবে চলমান বিরোধ এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে এ অ্যাপটি ভারতের মতো কিছু দেশ ও কানাডায় নিষিদ্ধ রয়েছে। উইচ্যাটের প্রতিষ্ঠাকাল ২০১১। এর মূল প্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট।
৭. টেলিগ্রাম
তালিকায় টেলিগ্রামের অবস্থান সপ্তম। টেলিগ্রামের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০ কোটি। এটি কঠোরভাবে গোপনীয়তা বজায় রাখে। গোপনীয়তা বজায় থাকা এবং নানামুখী ফিচারের কারণে টেলিগ্রাম প্রায়ই ব্যবসায়িক যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়। তবে নিরাপত্তাজনিত ও অবৈধ কনটেন্টের জন্য অনেক দেশে টেলিগ্রাম সমালোচিতও হয়েছে। এরপরও অনেকেই এর এনক্রিপ্টেড মেসেজিং ও নিজের মতো করে সাজিয়ে নেওয়ার সুবিধাগুলোর প্রশংসা করেন। টেলিগ্রামের প্রতিষ্ঠাকাল ২০১৩ সালের আগস্ট।
৮. মেসেঞ্জার
সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তালিকায় মেসেঞ্জারের অবস্থান অষ্টম। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন রিচের হিসাব দেওয়া হয়েছে। মেসেঞ্জারে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রায় ৯৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। মেসেঞ্জার মেটার তৈরি একটি অ্যাপ, যা ফেসবুকের সঙ্গে সহজেই যুক্ত হয়ে চ্যাট, ভয়েস কল ও ভিডিও কলে কথা বলার সুবিধা দেয়। মেসেঞ্জারের নিজস্ব বিজ্ঞাপন পরিকল্পনার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বজুড়ে অন্তত ৯৪ কোটি ৭০ লাখ মানুষ মেসেঞ্জার ব্যবহার করছিল। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, ওই সময় বিশ্বের ১৩ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের প্রায় ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ মেসেঞ্জার ব্যবহার করছিল।
৯. স্ন্যাপচ্যাট
তালিকায় স্ন্যাপচ্যাটের অবস্থান তৃতীয়। স্ন্যাপচ্যাটের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮৫ কোটি। এ অ্যাপটি বিশেষভাবে কম বয়সীদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। স্ন্যাপ ম্যাপ ও স্পটলাইটের মতো ফিচার স্ন্যাপচ্যাটে সামাজিক যোগাযোগ ও বিনোদনের মিশ্রণ গড়ে তুলেছে। স্ন্যাপচ্যাটের নিজস্ব টুলে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে স্ন্যাপচ্যাটের বিজ্ঞাপন ৭০ কোটি ৯০ লাখ ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছেছিল।
১০. দৌউইন
তালিকার দশম অবস্থানে আছে দৌউইন। এটি টিকটকের চীনা সংস্করণ। ব্যবসায়ী, ইনফ্লুয়েন্সার এবং সাধারণ ব্যবহারকারীরা বিনোদন, ব্যবসা, হোটেল বুকিং এবং ভাইরাল কনটেন্টের জন্য এর ওপর নির্ভর করে। এর মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭৭ কোটি। দৌউইনের প্রতিষ্ঠাকাল ২০১৬। এর মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.