07/21/2025 ব্রাজিলে হস্তক্ষেপ করতে ট্রাম্পের কাছে সাহায্য চাইলেন এডুয়ার্দো
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৯ জুলাই ২০২৫ ১৮:৫৩
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর তৃতীয় ছেলে এডুয়ার্দো বলসোনারো চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সেখানে থেকে তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাধ্যমে নিজ দেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে দেশে তাঁর বাবার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একটি বিচার কার্যক্রম চলছে। ঠিক এই সময়েই এডুয়ার্দোর যুক্তরাষ্ট্রে তদবির করার বিষয়টি সামনে এসেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয়ের পর বলসোনারো একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এই অভিযোগে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এডুয়ার্দোকে তাঁর বাবা সামরিক ঢঙে ‘নাম্বার থ্রি’ বলে ডাকতেন। তিনি হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করছেন এবং তাঁর তদবির থেকেই ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েসের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসে। মোরায়েস সেই বিচারপতি; যিনি বলসোনারোর বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান তদারককারী।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘটনায় সরাসরি বলসোনারোকে সমর্থন দিয়েছেন। প্রথমে তিনি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবি করেন। পরে হুমকি দেন, ব্রাজিলের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
ট্রাম্প এই মামলাকে আখ্যা দিয়েছেন ‘উইচ হান্ট’ বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা বলে, যা ‘অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত’।
শুক্রবার ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট জইর বলসোনারোর বাড়িতে তল্লাশির নির্দেশ দেয়। বলসোনারোর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁর পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। পাশাপাশি বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং রাত ৭টা থেকে সকাল ৭টা ও ছুটির দিনগুলোতে বাড়ির বাইরে যাওয়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এ ছাড়া দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন—এমন আশঙ্কায় সাবেক প্রেসিডেন্টের গোড়ালিতে ইলেকট্রিক ট্যাগ লাগিয়েছে দেশটির ফেডারেল পুলিশ।
বিচারপতি মোরায়েস এই পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দেন, বলসোনারো ও তাঁর ছেলে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ‘শত্রুতামূলক তৎপরতা’ চালাচ্ছেন। বলসোনারোর দেশত্যাগের ‘সম্ভাবনা’ রয়েছে, তাই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র বিচারপতির এই পদক্ষেপের পর মোরায়েস ও সুপ্রিম কোর্টের অন্য সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, আদালতের এই পদক্ষেপগুলো ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ এবং তাৎক্ষণিকভাবে মোরায়েস ও তাঁর পরিবারের ভিসা বাতিলের নির্দেশ দেন।
এডুয়ার্দো বলসোনারো ২০১৫ সাল থেকে সাও পাওলোর ফেডারেল সদস্য। গত সপ্তাহে তিনি হোয়াইট হাউসের সামনে থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে জানান, তিনি একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছেন। সেই ভিডিওতে তিনি ইঙ্গিত দেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, আরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।’ তাঁর এই ভিডিও ব্রাজিলের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাধ্যমে নিজ দেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।
ফার-রাইট প্রভাবশালী ব্যক্তি পাওলো ফিগেইরেদো বলসোনারোর মামলায় অভিযুক্ত। তিনিও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান করছেন। সম্প্রতি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক পোস্টে জানান, তিনিও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং ব্রাজিল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সিদ্ধান্ত এখন ‘প্রাধান্য পাবে’।
এডুয়ার্দো বলসোনারো বহুদিন ধরে আন্তর্জাতিক ডানপন্থী রাজনীতির একজন মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইংরেজিতে পারদর্শী বলসোনারো পরিবারের একমাত্র সদস্য হিসেবে তিনি বাবা জইরের প্রচারে আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা ঘনিষ্ঠ ছিল ডানপন্থী আদর্শিক ব্যক্তি ওলাভো দে কারভালোর সঙ্গে, যার মাধ্যমে তিনি যুক্ত হন স্টিভ ব্যাননের সঙ্গে (ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা)।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিজের ছেলেকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেন জইর বলসোনারো। তবে সিনেটরদের সঙ্গে তদবির শুরু করলেও পর্যাপ্ত সমর্থন না পাওয়ায় পরে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন এডুয়ার্দো।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বিশ্লেষক নিকোলাস সালদিয়াস বলছেন, ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ ব্রাজিলের ক্ষমতাসীন বামপন্থী জোটের পক্ষে কাজে লেগেছে। কারণ, দেশের রাজনীতিতে এমন বিদেশি হস্তক্ষেপের ফলে প্রেসিডেন্ট লুলা এখন জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.