07/20/2025 গাজায় যুদ্ধের পর প্রথমবার পরীক্ষা দিলেন ১৫০০ শিক্ষার্থী
মুনা নিউজ ডেস্ক
১৯ জুলাই ২০২৫ ২০:০৫
২০২৩ সালে অক্টোবরে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথমবারের মতো গাজার শত শত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। এই পরীক্ষার আয়োজন করেছে উপত্যকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। চলতি মাসের শুরুতে গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয় শনিবার এই পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেয়। ইসরাইলের তথাকথিত ‘গণহত্যামূলক যুদ্ধ’ শুরুর পর এটিই হচ্ছে প্রথম পরীক্ষা।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রায় ১,৫০০ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। এটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে এবং পরীক্ষার সুষ্ঠু আয়োজন নিশ্চিতে সব প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
কিছু শিক্ষার্থী নিজ নিজ বাসা থেকে, আবার কেউ কেউ নিরাপত্তা বিবেচনায় বিভিন্ন এলাকায় নির্ধারিত কেন্দ্রে বসে অনলাইন পরীক্ষা দিচ্ছেন—যেহেতু গাজা প্রতিদিনই ইসরাইলি বোমাবর্ষণের মুখে রয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম দেইর আল-বালাহ থেকে জানান, ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য এই পরীক্ষা শুধু উচ্চশিক্ষা নয়, বৃত্তি ও অবরুদ্ধ জীবনের গণ্ডি পেরোনোর একটি সম্ভাবনার দরজা।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে, শ্রেণিকক্ষ বা বই ছাড়াই, প্রায় না থাকা ইন্টারনেটের মধ্যেও গাজার শিক্ষার্থীরা লগ ইন করছে, পরীক্ষা দিচ্ছে—যেন তারা যুদ্ধকে তাদের ভবিষ্যৎ মুছে ফেলতে দিচ্ছে না।’
যুদ্ধ শুরুর পর গাজার বহু শিক্ষার্থীর পড়াশোনা থমকে গিয়েছিল। শনিবারের পরীক্ষার ফল তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সহায়তা করবে। অনেকেই এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার কথা থাকলেও এখনো মাধ্যমিক পর্যায়ে আটকে আছেন, কারণ ইসরাইলি হামলায় গাজার শিক্ষাব্যবস্থা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে—গাজায় এটি প্রথমবারের মতো এমন উদ্যোগ। এর মাধ্যমে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা ঘরে বসেই চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে পারছেন।
কেন্দ্রীয় গাজা গভর্নরেটের পরীক্ষাসংক্রান্ত পরিচালক মোরাদ আল-আগা আল জাজিরাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অ্যাপ ডাউনলোড করে পরীক্ষা দিচ্ছে, তবে তারা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে সেসব সমস্যার কথা তুলে ধরেছি যেন তারা সমাধান করতে পারে এবং পরীক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারে।’
বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা কখনো ক্যাফে, কখনো তাঁবু, কখনো আশ্রয়কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে, যেখানেই বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই তারা পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে।
চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মক টেস্ট নেওয়া হয়েছে। এতে যেমন তাদের প্রস্তুতি যাচাই হয়েছে, তেমনি প্রযুক্তিগত প্ল্যাটফর্মের কার্যকারিতাও দেখা হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীদের মতে, গাজার বাস্তবতায় ডিজিটাল পরীক্ষা নেওয়া অত্যন্ত কঠিন।
শিক্ষার্থী দোহা খাত্তাব বলেন, ‘আমরা অনলাইনে পরীক্ষা দিচ্ছি, কিন্তু এটি অত্যন্ত কঠিন। ইন্টারনেট দুর্বল, অনেকের কাছে কোনো ডিভাইস নেই, নিরাপদ পরিবেশও নেই। আমাদের বইগুলোও বোমায় ধ্বংস হয়ে গেছে।’
এই পরিস্থিতিতে কিছু শিক্ষক ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল খুলে আবারও শিক্ষার্থীদের গাইড করছেন।
শিক্ষিকা ইনাম আবু স্লিসা বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের জন্য এটি প্রথম অনলাইন পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত। তাই আমরা ধাপে ধাপে তাদের সহায়তা করছি।’
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় শিক্ষাব্যবস্থার ৯৫ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ফলে স্কুলবয়সি প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার শিশু এখন আর স্কুলে যেতে পারছে না।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে গাজার শিক্ষা অবকাঠামো ধ্বংস করেছে, যা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
গাজার বহু জাতিসংঘ-চালিত স্কুল এখন বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তবে সেগুলোও নিয়মিত ইসরাইলি হামলার লক্ষ্য হচ্ছে।
এই কঠিন বাস্তবতায় গাজার শিক্ষার্থীরা লড়াই করে যাচ্ছেন, পরীক্ষার মাধ্যমে তারা যুদ্ধের মাঝেও নিজেদের ভবিষ্যৎ ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.