07/25/2025 তুলির আঁচড়ে গাজায় নিহত মানুষদের বিশ্ববাসীর সামনে আনলেন আলজেরিয়ার শিল্পী
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৩ জুলাই ২০২৫ ২০:৩৮
আলজেরিয়ার শিল্পী আবুলহাক আবিনা তার তুলির মাধ্যমে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মুখগুলোকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরছেন। তার শিল্পকর্মের মাধ্যমে তিনি ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব এবং তাদের ন্যায্য অধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। তিনি তুলি আর রঙ দিয়ে আঁকছেন সেই সব মুখ, যাদের গল্প আজ হারিয়ে যাচ্ছে যুদ্ধের অন্ধকারে।
গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের স্মৃতি ধরে রাখতে তিনি এই প্রতিকৃতিগুলো এঁকেছেন। তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব আছে, এবং তারা চাইলেও বা না চাইলেও এটি থাকবে।”
গত ৫ জুলাই প্যারিসে গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে একটি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন আবিনা। সেখানে তিনি দুটি প্রতিকৃতি প্রদর্শন করেন-একটিতে গাজায় ইসরায়েলি হামলার চিত্র এবং অপরটিতে ৬ বছরের ফিলিস্তিনি শিশু হিন্দ রাজাবের প্রতিকৃতি, যিনি ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হন।
বার্তাসংস্থা আনাদোলুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আবিনা জানান, প্রতিটি প্রতিকৃতি তৈরি করতে তার প্রায় ৬৫ ঘণ্টা সময় লেগেছে। তিনি বলেন, গাজায় নিহত শিশুদের ভুলে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে এবং তাদের অন্তত একটি চিত্র রেখে যেতে তিনি এই কাজ করছেন। তিনি ১৩ বছর বয়স থেকেই ফিলিস্তিনের পক্ষে কাজ করে আসছেন।
তিনি মিডিয়ার সমালোচনা করে বলেন, “ইসরায়েলিদেরকে এমনভাবে দেখানো হয় যেন তারা সভ্যতাপ্রিয়, সিনেমা দেখেন, ভালো খাবার খান, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের, যাদের ভূমি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, তাদেরকে বর্বর হিসেবে চিত্রিত করা হয়।” এই ভ্রান্ত ধারণার বিরুদ্ধে তিনি তার শিল্পকর্মের মাধ্যমে তিনি প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
আবিনা ফ্রান্স সরকার, রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং বিভিন্ন বিদেশি সরকার ও মিডিয়াকে গাজার গণহত্যায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “যা ঘটছে তা একটি গণহত্যা, এবং সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো অনেক রাষ্ট্র এতে সহযোগিতা করছে।” তিনি আরও জানান, তিনি একদল শিল্পীর সঙ্গে মিলে গাজায় নিহত নারী-পুরুষদের প্রতিকৃতি নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করছেন।
হিন্দ রাজাবের প্রতিকৃতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবিনা বলেন, “গণহত্যাকারী এই শিশুটিকে হত্যা করেছে।” তিনি উল্লেখ করেন, হিন্দের মৃত্যুর মুহূর্ত রেকর্ড করা হয়েছিল, এবং তিনি তার শিল্পের মাধ্যমে সেই মুহূর্তগুলো তুলে ধরতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, “এই ছোট্ট মেয়েটি গাজায় নিহত সকল ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রতিনিধিত্ব করে, যাদের নাম এবং মুখ ইউরোপীয় মিডিয়ায় কখনো দেখানো হয় না।”
তিনি ইউরোপীয়দের উদ্দেশে বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিদের প্রতি তারা যা করেছিল, তার জন্য তাদের মনে অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব রয়েছে, কিন্তু ফিলিস্তিনিরা এই নৃশংসতার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়।”
আবিনা জোর দিয়ে বলেন, বিবেকবান মানুষ গাজার গণহত্যা চলতে দিতে পারে না। শিল্প, সিনেমা, সাহিত্য- প্রতিটি মাধ্যম ব্যবহার করে নিহতদের মুখগুলোকে দৃশ্যমান করতে হবে। তিনি তার একটি চিত্রকর্মে গাজার একজন ডাক্তার, একজন সাংবাদিক এবং একজন মা তার শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়ানোর দৃশ্য অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
এছাড়াও তিনি হান্দালা নামক কার্টুন চরিত্র, ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকারের প্রতীক “রিটার্নের চাবি”, শান্তির প্রতীক জলপাইয়ের ডাল এবং গাজায় নিহত নির্দোষতার প্রতীক হিসেবে একটি স্কুল নোটবুক যুক্ত করেছেন।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.