10/14/2025 দক্ষিণ কোরিয়ায় সি-এর সাথে দেখা করবেন ট্রাম্প, তারপর যাবেন চীনে
মুনা নিউজ ডেস্ক
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:২১
আসন্ন অক্টোবরের শেষে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে দেখা করবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর সামনের বছর যাবেন চীনে। শুক্রবার সির সঙ্গে দীর্ঘ ফোনালাপের পর এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এই ফোনালাপের পর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বলেন, অক্টোবরের শেষ দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় একটি আঞ্চলিক শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং পরবর্তী বছরের শুরুতে চীনে সফর করবেন।
পোস্টে ট্রাম্প আরও জানান, ‘উপযুক্ত’ সময় হলে সি চিন পিংও যুক্তরাষ্ট্রে আসবেন। তাঁরা ‘টিকটক চুক্তি’ অনুমোদন নিয়ে আলোচনায় অগ্রসর হয়েছেন বলেও জানান ট্রাম্প।
তিনি বলেন, জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি যাতে যুক্তরাষ্ট্রে চালু থাকতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনার অগ্রগতি হয়েছে। তবে এর বিস্তারিত কিছুই জানাননি তিনি।
এদিকে চীনা সরকারের বিবৃতিতে এসব সফরের কোনো উল্লেখ করা হয়নি। টিকটকের চীনা মূল কোম্পানির নিয়ন্ত্রণকারী শেয়ার বিক্রিতে সি চিন পিংয়ের সম্মতির বিষয়েও কোনো তথ্য তুলে ধরা হয়নি। তবে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সি ট্রাম্পকে বলেছেন, ‘বাণিজ্য সম্পর্ক আরও খারাপ হওয়া থেকে রক্ষা করতে বাণিজ্য বিধিনিষেধ আরোপ এড়াতে।’
যদিও বহুল প্রতীক্ষিত এই ফোনালাপ বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনীতির দেশের নেতাদের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তবে বিবৃতিগুলো থেকে ধারণা পাওয়া যায়, পরস্পরবিরোধী বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির দুটি দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক কতটা জটিল। তবে, তাঁদের মধ্যে ইতিবাচক অবস্থানের একটি প্রমাণ হলো সামনাসামনি সাক্ষাতের ইচ্ছা।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ফোনালাপটি খুবই ভালো ছিল। আমরা আবারও ফোনে কথা বলব। টিকটক অনুমোদনের জন্য কৃতজ্ঞ। এপিইসিতে সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছি দুজন।’
এপিএসি হলো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২১টি অর্থনীতির এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন গ্রুপ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প আরও বলেন, বিনিয়োগকারীরা টিকটকে বিনিয়োগে আগ্রহী। সিকে এই আলোচনা প্রসঙ্গে ‘এ জেন্টেলম্যান’ বলে অভিহিত করেন ট্রাম্প। তবে টিকটকের অ্যালগরিদমের মালিকানা প্রসঙ্গে কিছুই বলেননি প্রেসিডেন্ট।
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, সির সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা কথা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সবকিছু নিয়ে কাজ চলছে। আমাদের খুব ভালো নিয়ন্ত্রণ থাকবে।’
টিকটকের চীনা মালিকানাধীন মূল কোম্পানি বাইটড্যান্স এক বিবৃতিতে দুই নেতাকেই ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপটির পরিষেবা অব্যাহত রাখার জন্য চলমান আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে মালিকানার বিষয়টি কীভাবে সমাধান হবে, সে সম্পর্কে তারা বিস্তারিত কিছু জানায়নি। ট্রাম্পও জানান, চুক্তিটি ‘অনেক দূর’ এগিয়েছে।
মাদ্রিদে বাণিজ্য আলোচনার সময় চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে অ্যাপটির মালিকানার বিষয়ে একটি কাঠামো চুক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
গত বছর ডেটা গোপনীয়তা এবং জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণে বাইটড্যান্স থেকে টিকটককে আলাদা করার জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ট্রাম্প এই সময়সীমা বেশ কয়েকবার বাড়িয়েছেন।
কর্মকর্তারা বাইটড্যান্সের উৎস এবং মালিকানা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁরা চীনের এমন কিছু আইনের দিকে ইঙ্গিত করেছে, যা অনুযায়ী চীনা কোম্পানিগুলো সরকারের অনুরোধে তাদের কাছে থাকা তথ্য দিতে বাধ্য।
গত সোমবার চীনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘মেধাস্বত্ব অধিকার ব্যবহারের’ অনুমোদন, যার মধ্যে অ্যালগরিদমও অন্তর্ভুক্ত, সে বিষয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে। এ ছাড়া, দুই পক্ষ ব্যবহারকারীদের ডেটা এবং কনটেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একজন অংশীদারের ওপর দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়েও সম্মত হয়েছে।
চীনের বিবৃতি অনুযায়ী, ফোনালাপে সি ট্রাম্পকে বলেছেন, বেইজিং বাজারের নিয়ম মেনে ফলপ্রসূ বাণিজ্যিক আলোচনা দেখে খুশি হবে। যা চীনের আইন ও প্রবিধান মেনে একটি সমাধান বের করতে এবং উভয় পক্ষের স্বার্থ বিবেচনা করতে সাহায্য করবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি উন্মুক্ত, ন্যায্য এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ তৈরি করা।’
ওয়াশিংটনের থিঙ্কট্যাংক ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিসের জ্যেষ্ঠ চীনা গবেষক ক্রেইগ সিঙ্গেলটন বলেন, টিকটক নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো চুক্তি হয়েছে বলে মনে হয় না।
তিনি বলেন, ‘বেইজিং চীনের আইন অনুযায়ী বাজারভিত্তিক আলোচনার কথা বলে, যার ফলে তাদের হাতে কার্যত ভেটোর ক্ষমতা থেকে যায়। অন্যদিকে, ট্রাম্প নিজেকে চূড়ান্ত অনুমোদনকারী হিসেবে তুলে ধরছেন।’
শুক্রবারে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, তাঁরা আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অগ্রগতি করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, ফেন্টানিল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা।
এর আগের দিন ট্রাম্প বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হতে পারে যদি ইউরোপীয় দেশগুলো চীনের ওপর উচ্চতর শুল্ক আরোপ করে। ট্রাম্প ভারতের ওপর যেমন মস্কোর তেল কেনার জন্য শুল্ক আরোপ করেছিলেন, বেইজিংয়ের ওপরও তিনি একই রকম শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা করছেন কি না, তা অবশ্য জানাননি।
গত মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনা কর্মকর্তারা চার দফায় বাণিজ্য আলোচনা করেছেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরও একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উভয় পক্ষই উচ্চ শুল্ক স্থগিত করেছে এবং কঠোর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ থেকে কিছুটা পিছিয়ে এসেছে।
তবে, প্রযুক্তি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য ক্রয় বা ফেন্টানিল নিয়ে তারা এখনো কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি। ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর কারণ হিসেবে অভিযোগ করা হয়েছে, বেইজিং এমন রাসায়নিকের প্রবাহ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে আফিম জাতীয় (অপিওয়েড) ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
এর জবাবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে চীনের সঙ্গে শুরু হওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে কৃষকেরা তাঁদের অন্যতম প্রধান বাজার হারিয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত চীনে কৃষিপণ্যের রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৩ শতাংশ কমে গেছে। কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি, যেমন—চীনে যুক্তরাষ্ট্রের জোয়ার বিক্রি ৯৭ শতাংশ কমেছে।
ইউএস-চায়না বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি শন স্টেইন বলেন, যদি ফেন্টানিল-সম্পর্কিত শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়, তাহলে বেইজিং তার প্রতিশোধমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে নেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য ও অন্যান্য পণ্যের কেনাকাটা আবার শুরু করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘এর ফলে বাজারে অনেক ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে এবং ফেন্টানিলের মানবিক সংকটও হ্রাস পাবে।’
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.