10/14/2025 তহবিল হ্রাসের কারনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিজ্ঞানীদের চীনে চলে যাওয়ার হিড়িক
মুনা নিউজ ডেস্ক
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৫
চীনের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের যোগদানের হার বাড়ছে। সিএনএনের এক সমীক্ষা বলছে, ২০২৪ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৮৫ জনের বেশি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক চীনে স্থায়ীভাবে যোগ দিয়েছেন। যার অর্ধেকের বেশি এ বছর যোগদান করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের গবেষণা বাজেট কমানো ও বিদেশী শিক্ষার্থীর ভিসা ব্যয় বাড়ানো এই ধারাকে আরো ত্বরান্বিত করছে। অন্যদিকে গবেষণায় চীনের বাড়তি বিনিয়োগ গবেষকদের জন্য দিচ্ছে বাড়তি সুবিধা।
এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বিশ্বসেরা গবেষক টানার ক্ষমতাই দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নেতৃত্বের মূলভিত্তি ছিল। এখন সেই অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বেইজিং। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, সেমিকন্ডাক্টর, বায়োটেক ও সামরিক প্রযুক্তির মতো ভবিষ্যত নির্ধারণী খাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছে।
চীনা সরকার দীর্ঘদিন ধরে বিদেশী গবেষক—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ডিগ্রি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়া চীনা বিজ্ঞানীদের ফেরানোর চেষ্টা করছে। এখন তা আরো জরুরি, কারণ যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তি রফতানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মনে করেন, নিজস্ব উদ্ভাবনই চীনের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার একমাত্র পথ।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন গবেষণা বাজেটে বড় ধরনের কাটছাঁটের প্রস্তাব দিয়েছে, বিদেশী শিক্ষার্থীর ভিসা ব্যয় বাড়িয়েছে, সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফেডারেল অর্থায়নকে চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার বানিয়েছে। প্রিন্সটনের সমাজবিজ্ঞানী ইউ শি চীনের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সফরের পর সিএনএনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিগুলো চীনের জন্য উপহার হয়ে ধরা দিয়েছে।
চীন সম্প্রতি বিদেশী গবেষকদের জন্য নতুন ক্যাটাগরির ‘কে ভিসা’ চালুর ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে সরকার অতিরিক্ত গবেষণা অনুদান কার্যক্রম চালু করেছে। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশী গবেষকদের জন্য মোটা অঙ্কের অনুদান, বাড়িভাড়া সহায়তা, পরিবারভিত্তিক সুবিধা ও দ্রুত গবেষণা অনুদান পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। বিশেষ করে এআই, রোবোটিক্স, নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ও সেমিকন্ডাক্টর খাতে চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
মারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বর্তমানে সাংহাই ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোটিন রসায়নবিদ লু উ-ইউয়ান বলছেন, বিদেশ থেকে আসা আবেদনকারীর সংখ্যা স্পষ্টতই বেড়েছে। এই ধারা শক্তিশালী ও সম্ভবত অপরিবর্তনীয়।
চিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ লিউ জুন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি নিয়ে আলাদা কোনো সরকারি কর্মসূচি না থাকলেও বিভাগগুলো সক্রিয়ভাবে বিদেশী সহকর্মীদের কাছে টানতে চাইছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে চীন বিদেশী প্রযুক্তি চুরি করছে। এ কারণে আগের ‘থাউজ্যান্ড ট্যালেন্টস প্রোগ্রাম’ নিয়ে কঠোর নজরদারি হয়েছিল। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চালু হওয়া বিতর্কিত ‘চায়না ইনিশিয়েটিভ’ও সেই নজরদারির অংশ ছিল, যা পরবর্তীতে সমালোচনার মুখে বাতিল হয়। গবেষণা বলছে, ওই কর্মসূচি চালুর পর যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত চীনা বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানীদের দেশত্যাগ ৭৫ শতাংশ বেড়েছিল। তাদের দুই-তৃতীয়াংশ চীনেই ফিরেছিলেন।
অনেক বিশ্লেষকের মতে, তিন দশক আগেও চীন দরিদ্র ও বৈজ্ঞানিকভাবে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। ২০২৩ সালে দেশটি গবেষণা ও উন্নয়নে খরচ করেছে ৭৮০ বিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৮২৩ বিলিয়নের কাছাকাছি।
শি জিনপিং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে চীন হবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ‘আত্মনির্ভরশীল শক্তিশালী দেশ।’ এরইমধ্যে দেশটি চন্দ্রাভিযান, কোয়ান্টাম যোগাযোগ, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি ও হাইপারসনিক মিসাইল প্রযুক্তিতে সাফল্য দেখিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণার জন্য সবচেয়ে বড় শর্ত হলো শান্ত পরিবেশ ও পর্যাপ্ত অর্থায়ন। যুক্তরাষ্ট্র যদি বাজেট কমাতে থাকে, তবে শুধু চীনের কাছে নয়, ইউরোপসহ অন্যান্য দেশের কাছেও সেরা মেধা হারাতে পারে।
A Publication of MUNA National Communication, Media & Cultural Department. 1033 Glenmore Ave, Brooklyn, NY 11208, United States.