নিউ অরলিন্স জেল থেকে ১০ জন পলাতক; ৭ জনই খুনের আসামী

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৭ মে ২০২৫ ২২:৪৪

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

নিউ অরলিন্সের একটি কারাগার থেকে গত শুক্রবার রাতে দশজন বন্দী পালিয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, বন্দীরা টয়লেটের পেছনের একটি ছিদ্র দিয়ে এবং প্রাচীর টপকে পালিয়ে যায়। তাদের সেল ব্লকের একমাত্র প্রহরী যখন খাবার আনতে গিয়েছিলেন, তখনই এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় শেরিফ জানিয়েছেন, পলাতক বন্দীদের মধ্যে হত্যা মামলার আসামিও রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, কারাগারের ভেতরের কেউ তাদের পালাতে সাহায্য করেছে। পলাতকদের মধ্যে সাতজন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রচারিত নজরদারি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বন্দীরা কারাগার থেকে দৌড়ে পালাচ্ছে–কারও পরনে কমলা রঙের পোশাক, আবার কারও সাদা। তারা কাঁটাতারের বেড়া টপকানোর জন্য কম্বল ব্যবহার করে এবং এরপর কয়েকজনকে কাছাকাছি আন্তঃরাজ্য সড়ক পেরিয়ে একটি আবাসিক এলাকার দিকে দৌড়াতে দেখা যায়।

বার্তা সংস্থা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে থাকা একটি ছবিতে দেখেছে, একটি সেলের টয়লেটের পেছনে একটি খোলা জায়গা। ওই দিক দিয়েই বন্দীরা পালিয়েছে। ছিদ্রটির ওপরে লেখা ‘To Easy LoL’। ফাঁকের দিকে নির্দেশ করা একটি তীর চিহ্নও আঁকা রয়েছে।

কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে কারাগারের দুর্বল পরিকাঠামোর বিষয়ে অভিযোগ করে আসছিলেন। বন্দীরা সেই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে। দশজন বন্দীর অনুপস্থিতি কয়েক ঘণ্টা ধরে কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি। সাত ঘণ্টারও বেশি সময় পর, নিয়মিত সকালের রোল কলের সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এই পালানোর ঘটনা জানতে পারে।

শেরিফের অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই বন্দীদের যেই পডে রাখা হয়েছিল সেখানে কোনো ডেপুটি ছিলেন না। সেখানে একজন টেকনিশিয়ান ছিলেন, একজন বেসামরিক ব্যক্তি পডটি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তিনি খাবার আনতে বাইরে গেলে তারা পালিয়ে যায়।

পালানোর পরপরই, ২০ বছর বয়সী কেন্ডাল মাইলস নামে একজন বন্দীকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে কর্তৃপক্ষ। এর আগেও তিনি দুবার কিশোর আটক কেন্দ্র থেকে পালিয়েছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় আরও দুজন পলাতককে আটক করা হয়েছে।

অরলিন্স প্যারিশের শেরিফ সুসান হাটসন বলেছেন, ‘ত্রুটিপূর্ণ তালার’ কারণে বন্দীরা অরলিন্স জাস্টিস সেন্টার থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছে।

হাটসন আরও বলেন, তাঁর বিভাগের ভেতরের লোকেরাই যে তাদের পালাতে সাহায্য করেছে, এর ইঙ্গিত মিলেছে। ১ হাজার ৪০০ বন্দী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন কারাগারটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারও সাহায্য ছাড়া এই কারাগার থেকে পালানো প্রায় অসম্ভব, একেবারে অসম্ভব না হলেও।’

পলাতকেরা রাত ১টার দিকে ছিদ্রযুক্ত সেলে প্রবেশের জন্য একটি দরজা ভেঙে ফেলে। শুক্রবার রাতে অরলিন্স প্যারিশ শেরিফের অফিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্লাম্বিং ফিক্সচার রক্ষা করা লোহার বারগুলোর মধ্যে অন্তত একটি কোনো সরঞ্জাম ব্যবহার করে কাটা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কারাগার থেকে বের হওয়ার পর কয়েদির পোশাক ফেলে দেয় তারা। এরপর কীভাবে তাদের কয়েকজন এত দ্রুত সাধারণ পোশাক পেল, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

কর্তৃপক্ষ সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বন্দীদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেনি। প্রাথমিকভাবে কর্তৃপক্ষ ১১ জন পালিয়েছে বলে জানিয়েছিল। তবে শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যাকে পলাতক ভাবা হয়েছিল, তিনি আসলে অন্য একটি সেলে ছিলেন।

তদন্তের ফলাফল না আসা পর্যন্ত তিন কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয় যে কর্মীদের মধ্যে কেউ পালানোর সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা। কর্মকর্তারা খাবার আনতে যাওয়া প্রহরী বরখাস্ত হওয়া তিনজনের মধ্যে আছেন কিনা, তাও জানানো হয়নি।

নিউ অরলিন্সের কারাগারটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ফেডারেল নজরদারি এবং অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে একটি সম্মতি আদেশের অধীনে রয়েছে। ২০১৫ সালে জরাজীর্ণ অরলিন্স প্যারিশ কারাগারের পরিবর্তে অরলিন্স জাস্টিস সেন্টার খোলার পরেও নিরাপত্তা সমস্যা এবং সহিংসতা অব্যাহত ছিল। পুরোনো কারাগারেও পালানোর এবং হেফাজতে থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল।

২০১৩ সালে একজন ফেডারেল বিচারক বলেছিলেন, কারাগারটি বন্দীদের রাখার জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: