ছবি: সংগৃহীত
                                    প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার জানিয়েছেন, গাজা যুদ্ধ অবসানে ‘গঠনমূলক অগ্রগতি’ হয়েছে এবং শিগগিরই সেখানে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা রয়েছে। জেরুজালেম থেকে এএফপি জানায়, ডাচ শহর দ্য হেগে নেটো সম্মেলনের প্রাক্কালে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আমাকে বলেছেন, গাজা এখন (ল যুদ্ধবিরতির) খুব কাছাকাছি। আমি মনে করি, গাজা নিয়ে দারুণ অগ্রগতি হয়েছে।’
তিনি এই আশাবাদের পেছনে ইরান ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সাম্প্রতিক সমঝোতাকে যুক্ত করেছেন, যা ইসরায়েল-ইরান ১২ দিনের যুদ্ধে ইতি টানতে পারে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান গাজা যুদ্ধ অবসানের পথ প্রশস্ত করতে পারে।
হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক অভিযান চালায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, হামাসের হামলায় ১,২১৯ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। এর জবাবে ইসরায়েলের অভিযানে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬,১৫৬, যাদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ।
গত মঙ্গলবার গাজার দক্ষিণে অভিযানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাতজন সৈন্য নিহত হন, যা যুদ্ধের অন্যতম প্রাণঘাতী দিন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ নিয়ে সরকারি জোটের শরিক দল ইউনাইটেড টোরাহ জুডাইজম পার্টির নেতা মোশে গাফনি সমালোচনা করে বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না কেন সেখানে লড়াই চলছে, সারাক্ষণই সেনারা নিহত হচ্ছে।’
কাতার মঙ্গলবার নতুন করে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগের ঘোষণা দেয়। হামাস জানায়, আলোচনার তীব্রতা বেড়েছে। হামাস নেতা তাহের আল-নুনু বলেন, ‘মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে তা আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।’ তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এখনো যুদ্ধ বন্ধের জন্য কোনো নতুন প্রস্তাব আমরা পাইনি।’
ইসরায়েলি সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও জানায় যে, ‘জিম্মিদের ফেরাতে যুদ্ধক্ষেত্র এবং আলোচনার উভয় পথেই কাজ চলছে।’ হামাসের হাতে অপহৃত ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে ৪৯ জন এখনো গাজায় আটকে রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৭ জনকে মৃত বলে মনে করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
অন্যদিকে, প্রতিদিন খাদ্য সহায়তা নিতে এসে বহু ফিলিস্তিনি প্রাণ হারাচ্ছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানায়, মঙ্গলবার খাবার সংগ্রহ করতে এসে ৪৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। বুধবার আবারও একই ধরনের হামলায় অন্তত ২০ জন মারা যান।
গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল বলেন, ‘গাজার মধ্যাঞ্চলে মানবিক সহায়তার জন্য জড়ো হওয়া জনগণের ওপর ইসরাইলি গুলিবর্ষণ ও ট্যাংক শেল বর্ষণের ঘটনা ঘটে।’ তবে ইসরায়েলি বাহিনী এ ধরনের হামলার বিষয়ে কিছু জানে না বলে জানিয়েছে।
জাতিসংঘ মঙ্গলবার গাজায় ‘খাদ্যকে অস্ত্র বানানোর’ প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত বেসরকারি সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করে।
মে মাসের শেষ দিকে জিএইচএফ গাজায় কার্যক্রম শুরু করে। তবে তা নিয়ে বিশৃঙ্খলা, প্রাণহানি ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জিএইচএফ যদিও এই মৃত্যুর দায় অস্বীকার করেছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মে মাসের শেষ দিক থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫০ জন খাদ্য সহায়তার লাইনে নিহত হয়েছেন।
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: