ফাইল ছবি
                                    প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভের সদরদপ্তরের ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সংস্কার প্রকল্পের প্রসঙ্গ তুলে পাওয়েলকে প্রতারণার অভিযোগে সরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্পের এই মনোযোগ এমন সময়ে এসেছে, যখন মাসের পর মাস ধরে তিনি ফেডের স্বাধীন অবস্থান ও সুদের হার না কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সরব সমালোচনা করে আসছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দৃষ্টি এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের সংস্কার প্রকল্পের দিকে। এর আগেই তিনি মাসের পর মাস ধরে স্বাধীন ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে আসছেন। কারণ ট্রাম্প বারবার সুদের হার কমানোর আহ্বান জানানো সত্ত্বেও ব্যাংকটি তা অপরিবর্তিত রেখেছে।
মঙ্গলবার ট্রাম্প পাওয়েলকে ‘নাম্বস্কাল’ ও ‘মোরন’ বলে উল্লেখ করার পাশাপাশি ইঙ্গিত দেন যে, সংস্কার প্রকল্পের খরচকে তার অপসারণের সম্ভাব্য ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ট্রাম্প কি পাওয়েলকে সরাতে পারেন?:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ট্রাম্প এই নজিরবিহীন পদক্ষেপ নেন, তবে তাকে অবশ্যই এমন একটি আইনসম্মত কারণ দেখাতে হবে, যার ভিত্তিতে কোনো কর্মকর্তাকে অপসারণ করা যায়। এ ক্ষেত্রে ‘দায়িত্বে অবহেলা’ বা ‘অপকর্ম’ উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে।
কলাম্বিয়া ল’ স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক লেভ মেন্যান্ড বলেন, অপসারণের জন্য কার্যকর প্রমাণও থাকতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হোয়াইট হাউস কোনো প্রমাণ প্রকাশ করেনি যে, পাওয়েল প্রকল্প পরিচালনায় দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘পোস্ট-প্যান্ডেমিক অর্থনীতিতে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে, আর ওয়াশিংটনের মতো শহরে ঐতিহাসিক ভবন সংস্কার করতে গেলে খরচ বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক।’
প্রকাশ্যে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে পাওয়েলকে অপসারণের কোনো উপযুক্ত কারণ দেখা যাচ্ছে না বলেও মেন্যান্ড মন্তব্য করেন। যদি অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়, তাহলে পাওয়েলকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানিয়ে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে এবং তিনি প্রক্রিয়াকালীন দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
ট্রাম্প বছরের শুরু থেকে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার জন্য ফেডের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। তার মতে, সুদের হার কমালে সরকারের ঋণ পরিশোধে খরচ হ্রাস পাবে। এছাড়া, ট্রাম্প দাবি করছেন যে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকায় সুদের হার কমানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ফেডের সংস্কার প্রকল্পকে পাওয়েল অপসারণের একটি সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে।বুধবার ট্রাম্প বলেন, ‘এই ২ দশমিক ৫ বা ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের সংস্কার প্রকল্পে সম্ভবত কোনো ধরনের প্রতারণা রয়েছে।’
এই প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউস বাজেট প্রধান রাসেল ভটের উদ্বেগের জবাবে পাওয়েল বৃহস্পতিবার এক চিঠিতে জানান যে, তিনি প্রকল্পের একটি নতুন পর্যালোচনার জন্য ফেডের স্বাধীন ইন্সপেক্টর জেনারেলকে অনুরোধ করেছেন।
তিনি আরও জানান, এখানে কোনো ভিআইপি ডাইনিং রুম বা ব্যক্তিগত লিফট তৈরি হচ্ছে না, বরং সংশ্লিষ্ট দুটি ভবনে বড় ধরনের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন ছিল।
আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএনজি-এর আমেরিকান অঞ্চলের প্রধান গবেষক প্যাড্রাইক গার্ভে বলেন, ‘পাওয়েলের মতো একজন প্রভাবশালী ও সম্মানিত ফেড চেয়ারম্যানকে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক জোরপূর্বক অপসারণ করলে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে এবং শেয়ারবাজারে ধস নামতে পারে।’
তবে, বিনিয়োগকারীরা এটিকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন যে, এখন সুদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হবে, ফলে কিছু সময়ের মধ্যেই বাজার আবার চাঙা হতে পারে।
তবে ট্রাম্প যদি পাওয়েলকে সরিয়ে দেন, তবুও সুদের হার দ্রুত কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত নয়। কারণ, ফেডের নীতিনির্ধারণী কমিটিতে ১২ জন ভোটার সদস্য রয়েছেন এবং তারা প্রত্যেকে নিজস্ব মূল্যায়নের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন। গার্ভে বলেন, ‘বর্তমানে ফেডের বিশ্বাসযোগ্যতা অক্ষুণ্ন রয়েছে এবং যতক্ষণ না পাওয়েল দায়িত্বে আছেন, তা বজায় থাকবে।’
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: