ফাইল ছবি
শহিদ শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভারতের 'টার্গেট কিলিং' ও আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ফের তোলপাড় চলছে। এরইমধ্যে সাংবাদিক পালকি শর্মার একটি বিশ্লেষণাত্মক ভিডিও এবং কানাডার শিখ নেতা গুরুপতবন্ত সিং পান্নুনের চাঞ্চল্যকর মন্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ ছড়িয়েছে। কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপ ও হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার গুরুতর অভিযোগ নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সাধারণত ভারতীয় গণমাধ্যমে জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখেই একপেশে খবর পরিবেশন করা হয়। তবে এবার প্রখ্যাত সাংবাদিক পালকি শর্মা সাম্প্রতিক একটি ভিডিও প্রতিবেদনে ভারতের বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন। অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে আন্তর্জাতিক বিতর্কের গভীরে গিয়ে এই বিস্ফোরক প্রশ্ন তুলে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। বিশেষ করে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার যে জোরালো অভিযোগ উঠেছে, সেটিকে তিনি আন্তর্জাতিক বিতর্কের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ভারতীয় এই সাংবাদিক। তার এই নির্ভীক বিশ্লেষণ ঝড় তুলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
কানাডা থেকে বাংলাদেশ: ভারতের টার্গেট কিলিংয়ের আন্তর্জাতিক ছক
বিদেশের মাটিতে ভারতের টার্গেট কিলিং নিয়ে পালকি শর্মা বলেন, ভারত ইতিপূর্বে কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের জন্যও অভিযুক্ত হয়েছে। কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় ভারতের জড়িত থাকার বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছিল।
পালকি শর্মা ইঙ্গিত দিয়েছেন, বাংলাদেশে ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডও সেই একই ধরনের আন্তঃসীমান্ত লক্ষ্যবস্তু করে হত্যার একটি অংশ হতে পারে। যখন একটি রাষ্ট্র বারবার তার সীমান্তের বাইরে গোপন অভিযানে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়, তখন সেই রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি এবং গণতান্ত্রিক মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক বলে মনে করেন তিনি। ‘‘এই ধরনের কর্মকাণ্ড সরাসরি গণতান্ত্রিক আচরণের পরিপন্থী’’, বলেন তিনি।
নেটিজেনরা মন্তব্য করেছেন, পালকি শর্মা যে পর্যায়ের স্পর্ধা এবং দক্ষতার সাথে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, তা সাংবাদিকতার জগতে বিরল। বিশেষ করে পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে এ ধরনের রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রশ্ন তোলার মতো সাংবাদিকের অভাব রয়েছে বলে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার এই অবস্থানকে 'সাংবাদিকতার বিজয়' হিসেবে দেখছেন।
বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে যে আহ্বান জানালেন শিখ নেতা হরদীপ সিং
এদিকে, ভারতের শিখ স্বাধীনতাকমী নেতা গুরুপতবন্ত সিং পান্নুন এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিহত ওসমান হাদিকে শহীদ হিসেবে অভিহিত করে তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলায় তাকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা হত্যা করেছে। শিখ নেতারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এবং প্রয়োজনে ভারতীয় দূতাবাসগুলো 'লকডাউন' করার আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় 'সেভেন সিস্টার্স' রাজ্যগুলোর স্বাধীনতার লড়াইয়ে বাংলাদেশের সমর্থন চেয়েছেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। পালকি শর্মার সাহসী বিশ্লেষণ এবং আন্তর্জাতিক মহলের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রমাণ করে যে, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ এবং টার্গেট কিলিংয়ের মতো বিষয়গুলো এখন আর শুধু একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নয়, বরং এটি বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অকুতোভয় সৈনিক ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ভারতবিরোধী তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা মনে করেন, দিল্লি ক্রমাগত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে চলেছে, যা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মর্যাদার পরিপন্থী। এই হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার জোরালো সম্ভাবনা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: