ফাইল ছবি
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য বা 'সেভেন সিস্টার্স' সংক্রান্ত একটি বক্তব্য দেওয়ার পর থেকে ঘুম হারাম আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার। তাই বাংলাদেশে নতুন করে অস্থিরতার অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা রাজ্যটিতে ‘হাই অ্যালার্ট’ বা উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার গুয়াহাটিতে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হিন্দুত্ববাদী শর্মা একথা জানান। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার প্রতিবেশী দেশটির পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে।’’
আসামের মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, ‘‘আমরা দেখেছি বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে এবং তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে... বর্তমানে যারা বাংলাদেশে ক্ষমতায় আছেন তারা উত্তর-পূর্ব ভারতকে তাদের দেশের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলছেন।’’
তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ‘‘বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে মানুষ আসামে প্রবেশ করেছে এবং রাজ্যটি এখন 'এইসব মানুষে পূর্ণ'। শর্মা বলেন, ‘‘আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং ওই দেশের পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে।’’
এদিকে, পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং সম্ভাব্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আসামের কাছাড় জেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ জারি করা হয়েছে।
গত সোমবার ঢাকার এক সমাবেশে এনসিপির শীর্ষ নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ভারতের সেভেন সিস্টার্স হিসেবে পরিচিত পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যকে 'ভারত থেকে আলাদা' করার বিষয়ে হুমকি দিয়েছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর শহিদ ওসমান হাদিকে হামলাকারীরা একটি মোটরসাইকেলে এসে গুলি করে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্তরা ভারতে পালিয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
সেই প্রেক্ষাপটে ইনকিলাব মঞ্চের আয়োজিত সভায়ই হাসনাত তার বক্তৃতার এক পর্যায়ে বলেছিলেন, ‘‘নির্বাচন বানচাল করতে চাইছে, দেশের পরিবেশকে যারা অস্থিতিশীর করতে চাইছে, সীমান্তে যারা আমাদের ভাইদেরকে-বোনদেরকে মেরে ঝুলিয়ে রাখে, তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পৃষ্টপোষকরা দিচ্ছে ভারত। ভারতকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা আমার দেশের সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না, যারা আমার দেশের সম্ভাবনাকে বিশ্বাস করে না, যারা ভোটাধিকারকে- মানবাধিকারকে বিশ্বাস করে না, যারা এ দেশের সন্তানকে বিশ্বাস করে না, আপনারা (ভারত) যেহেতু তাদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন, কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই–– ভারতের যারা সেপারেটিস্ট আছে, বাংলাদেশে আমরা তাদের আশ্রয়-প্রশয় দিয়ে যে সেভেন সিস্টার্স আছে সেটাকে ভারতে থেকে আলাদা করে দেবো।’’
গত সপ্তাহেই হাসনাতের এই বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় আসামির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি দাবি করেছিলেন, ‘বাংলাদেশি উপাদানগুলো' বারবার বলছে যে, উত্তর-পূর্ব ভারতকে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে একীভূত করা উচিত, যা অত্যন্ত অদায়িত্বশীল এবং বিপজ্জনক। ভারত এই বিষয়ে চুপ করে থাকবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, ‘‘ভারত একটি বিশাল দেশ, একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। বাংলাদেশ কীভাবে এই কথা চিন্তা করতে পারে?’’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: