ট্রাম্পের সাথে সম্মানজনক বাণিজ্য সম্পর্ক চায় ইইউ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৪ মে ২০২৫ ১৮:১২

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সম্মানভিত্তিক বাণিজ্য চুক্তি করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের হুমকির প্রেক্ষিতে ইইউ এই বার্তা দিয়েছে।

ইইউর বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফচোভিচ বলেন, ‘ইইউ সম্পূর্ণভাবে আলোচনায় যুক্ত এবং এমন একটি চুক্তি চায়, যা উভয় পক্ষের জন্য কার্যকর হয়। ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য অনন্য এবং এটি পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত, হুমকির ভিত্তিতে নয়।আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত।’

এর আগে শুক্রবার, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, ‘আমাদের ইইউর সঙ্গে আলোচনা কোনো দিকে এগোচ্ছে না।’ তিনি জানান, ১ জুন থেকে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক থাকবে না।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি কোনো নতুন চুক্তি খুঁজছি না – চুক্তি আমরা সেট করে ফেলেছি।’ তবে তিনি বলেন, কোনো ইউরোপীয় কম্পানি যদি যুক্তরাষ্ট্রে বড় বিনিয়োগ করে, তাহলে শুল্ক আরোপ স্থগিত করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় বাণিজ্য অংশীদার।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ইইউ যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে এবং ৩৭০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। ট্রাম্পের হুমকির জবাবে ইউরোপীয় দেশগুলো হুঁশিয়ারি দিয়েছে, অতিরিক্ত শুল্ক উভয় পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর হবে।

আইরিশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মার্টিন বলেন, ‘এই পথে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আলোচনাই একমাত্র টেকসই সমাধান।’

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরঁ সেন্ট-মার্টিন বলেন, ‘আমরা একই নীতিতে অটল, উত্তেজনা হ্রাস করতে চাই, তবে প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত।’ জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রী ক্যাথেরিনা রাইখে বলেন, ‘আমরা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সমাধানে পৌঁছানোর জন্য সবকিছু করতে হবে।’

ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কোফ বলেন, তিনি ইইউর বাণিজ্য কৌশলের প্রতি সমর্থন রাখেন এবং মন্তব্য করেন, ‘আমরা আগেও দেখেছি, আলোচনার সময় শুল্ক বাড়তেও পারে, কমতেও পারে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইইউ একটি সম্মিলিত ব্লক হিসেবে আলোচনা চালাচ্ছে। তবে ট্রাম্পের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা স্টিফেন মুর বিবিসিকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা শুরু করতে পারে।’ তার মতে, ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা বিশ্বকে চীনা প্রভাব থেকে বিচ্ছিন্ন করা, যা তার মতে ‘ভালো একটি ব্যাপার’ হবে।

চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে ট্রাম্প ইউরোপসহ একাধিক দেশের বিরুদ্ধে নতুন শুল্ক ঘোষণা করেন। ইইউ পণ্যের ওপর ২০% শুল্ক আরোপ করা হয়। তবে কিছুদিন পর তিনি তিন মাসের জন্য এই শুল্ক স্থগিত করেন, যাতে আলোচনার জন্য সময় পাওয়া যায়। তবে ততদিনেও ১০শতাংশ মৌলিক শুল্ক কার্যকর ছিল।

চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক বহাল থাকলেও, তা কিছুটা কমানো হয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫শতাংশ শুল্ক এখনো বলবৎ রয়েছে। ইইউ পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ১৮ বিলিয়ন ইউরোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিল, যা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বর্তমানে ৯৫ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের আমেরিকান পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক নিয়ে বিবেচনা করছে।

ট্রাম্প ইউরোপের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, বাণিজ্য ঘাটতির জন্য ইউরোপীয় নীতিগুলো দায়ী—বিশেষ করে গাড়ি ও কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে। তিনি অ্যাপলকেও সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে নির্মিত আইফোনের ওপর কমপক্ষে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। পরে এই হুমকি তিনি সব ধরনের স্মার্টফোনের জন্য প্রসারিত করেন।

ট্রাম্পের সর্বশেষ হুমকির পর শুক্রবার ইউএস এবং ইউরোপের শেয়ারবাজারে পতন দেখা দেয়। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ প্রায় ০.৭ শতাংশ কমে যায় এবং জার্মানির ড্যাক্স ও ফ্রান্সের ক্যাক ৪০ ১.৫ শতাংশের বেশি হারে কমে বন্ধ হয়।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: