ফাইল ছবি
                                    গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা ‘নেহাত বেঁচে থাকার চেয়েও বেশি কিছুর দাবিদার’ বলে মন্তব্য করেছেন মধ্যপ্রাচ্যে জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়কারী সিগরিদ কাগ। গাজায় ইসরাইলি অভিযান ৬০০তম দিনে গড়ানোর প্রেক্ষাপটে বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘ সদরদপ্তর থেকে এএফপি জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় শুরু হওয়া যুদ্ধের জেরে ইসরাইল এ মাসের শুরুতে গাজায় তাদের সামরিক অভিযান আরও জোরদার করেছে। একদিকে যুদ্ধ চলছে, অন্যদিকে একটি যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতাকারীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ু যা এখনও অধরা।
গাজায় তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্য দিয়ে ত্রাণ সরবরাহের বিষয়টি নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে। ইসরাইল টানা দুই মাস গাজা পুরোপুরি অবরোধের পর সম্প্রতি অল্প পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।
‘গাজায় ফের সংঘর্ষ শুরুর পর থেকেই বেসামরিক জনগণের জীবনযাপন আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট,’ বলেন সিগরিদ কাগ। তিনি বলেন, ‘মৃত্যু ওদের নিত্যসঙ্গী। এটা জীবন নয়, এটা আশাও নয়। গাজার মানুষ শুধুই বেঁচে থাকার জন্য নয়, একটি ভবিষ্যতের জন্যও যোগ্য।’
তিনি বলেন, বর্তমানে যে ত্রাণ প্রবেশ করছে ‘তা জাহাজডুবির পর একটি লাইফবোটের মতো।’ কাগ সতর্ক করেন, ফিলিস্তিন-ইসরাইল বিরোধের কোনো সমাধান ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে কোনো ‘টেকসই শান্তি’ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, পশ্চিম তীরও এখন ‘একটি বিপজ্জনক পথে’ এগোচ্ছে।
তিনি বলেন, 'এ সংঘাতের অবসানের লক্ষ্যে জুন মাসে অনুষ্ঠেয় একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ’। ‘এই সম্মেলনে অবশ্যই দখলদারিত্বের অবসান ও দুই রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নে একটি সুস্পষ্ট পথ খুলে দিতে হবে,’ বলেন কাগ।
গাজার মানুষের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সহমর্মিতা, সংহতি ও সহায়তা ু এই শব্দগুলো এখন অর্থহীন হয়ে পড়েছে।’ ‘আমরা যেন নিহত ও আহত মানুষের সংখ্যার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে না পড়ি। তারা সকলেই কারও কন্যা, কারও মা, কারও শিশু। প্রত্যেকের ছিল একটি নাম, একটি ভবিষ্যৎ, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা।’
নিরাপত্তা পরিষদে বুধবার গাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বক্তব্য দেন একজন মার্কিন সার্জন। ‘আমি এখানে এসেছি কারণ আমি গাজায় নিজের চোখে যা দেখেছি, বিশেষ করে শিশুদের অবস্থা, তা আমি না দেখে থাকার ভান করতে পারি না। আপনারাও অজ্ঞতার ভান করতে পারবেন না,’ বলেন ডা. ফেরোজ সিধওয়া।
তিনি বলেন, গাজার চিকিৎসাব্যবস্থা ব্যর্থ হয়নি, বরং ‘একটি পরিকল্পিত সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তা পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে।’ শিশুদের ‘রক্ষা করা উচিত’ ছিল, বলেন সিধওয়া, ‘কিন্তু গাজায় এই সুরক্ষা আর নেই।’
‘আমার অধিকাংশ রোগী ছিল কিশোর বয়সের আগের শিশু। বিস্ফোরণে শরীর ছিন্নভিন্ন, ধাতব টুকরায় ক্ষতবিক্ষত। অনেকেই মারা গেছে। যারা বেঁচে আছে, তাদের অনেকেই জেগে উঠে দেখেছে, পরিবারের কেউ আর জীবিত নেই।’ তিনি বলেন, ‘ওয়ার চাইল্ড অ্যালায়েন্স’-এর তথ্যমতে, গাজার প্রায় অর্ধেক শিশু আত্মহত্যাপ্রবণ।
‘তারা জিজ্ঞেস করে, 'আমার মা, বোন, বাবার সঙ্গে আমিও মরিনি কেন?' এটা উগ্রতা থেকে নয়, এই প্রশ্ন আসে অসহনীয় শোক থেকে। আমি ভাবি, এই পরিষদের কোনো সদস্য কি কখনও এমন কোনো পাঁচ বছর বয়সী শিশুর মুখোমুখি হয়েছেন, যে আর বেঁচে থাকতে চায় না?’
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: