
গাজায় চলমান যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসেছে হামাস। প্রস্তাবটি গত বৃহস্পতিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ইসরাইল এ প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। তবে হামাস জানিয়েছে, প্রস্তাবটি এখনো "আলোচনাধীন" এবং তাদের জনগণের প্রধান দাবিগুলো এতে প্রতিফলিত হয়নি।
রয়টার্স জানিয়েছে, প্রস্তাব অনুযায়ী যুদ্ধবিরতির প্রথম সপ্তাহে ২৮ জন ইসরাইলি (জীবিত ও মৃত) জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ১,২৩৬ জন ফিলিস্তিনি বন্দি ও ১৮০টি মৃতদেহ ফেরত দেওয়া হবে। এর বিনিময়ে ইসরাইল গাজায় সাময়িকভাবে সব ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধ করবে এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে অনুমতি দেবে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফের মাধ্যমে প্রস্তাবটি হামাসের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। মিশর ও কাতার এই আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম বলেন, "এই প্রস্তাব আমাদের জনগণের মূল দাবিগুলো পূরণ করছে না, বিশেষ করে যুদ্ধের স্থায়ী অবসান ও ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি।" হামাসের আরেক নেতা সামি আবু জুহরি বলেন, "এই প্রস্তাবে গাজায় অবাধ মানবিক সহায়তা প্রবেশের নিশ্চয়তাও নেই।"
এদিকে আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডা সতর্ক করেছে—যদি ইসরাইল আগ্রাসন ও বসতি সম্প্রসারণ বন্ধ না করে, তবে তারা টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
তার মাঝেই ইসরাইল দখলকৃত পশ্চিম তীরে আরও ২২টি নতুন ইহুদি বসতির অনুমোদন দিয়েছে। দেশটির চরমপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ এই সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছেন।
মানবিক সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে গাজায়। পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) তৃতীয় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র চালু করলেও জাতিসংঘ এটিকে অপ্রতুল ও অব্যবস্থাপনায় ভরা বলে মন্তব্য করেছে। বিশৃঙ্খলার মধ্যে হাজারো মানুষ ত্রাণের জন্য হুড়োহুড়ি করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের অভিযানের পর ইসরাইল যে সামরিক অভিযান শুরু করে, তা এখনো চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ পর্যন্ত ৫৪,২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আর সরকারি মিডিয়া অফিসের হিসেবে এই সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা শুক্রবার বা শনিবার প্রস্তাবের আনুষ্ঠানিক জবাব দেবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলেও একটি স্থায়ী সমাধান এখনও অনেক দূরের পথ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: