সংগৃহীত ছবি
                                    
দীর্ঘ ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে আলোচনা-পর্যালোচনা ও যাচাইয়ের পর অবশেষে পাকিস্তানকে ৩০০ কোটি ডলার জরুরি (বেইলআউট) ঋণ প্রদানে সম্মত হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
আইএমএফ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী জুলাই মাস থেকে ঋণের কিস্তি পাওয়া শুরু করবে পাকিস্তান। অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে ঋণ দান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেই দেশে ফিরবেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ শুক্রবার এক টুইটবার্তায় স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় অবশেষে দেশ এখন স্থিতিশীল উন্নয়নের পথে চলা শুরু করতে যাচ্ছে।’
বস্তুত, বছরের পর বছর ধরে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছিল পাকিস্তানের অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আমলে ২০১৯ সালে আইএমএফের সঙ্গে ৬৫০ কোটি ডলারের দীর্ঘমেয়াদী ঋণের চুক্তি করেছিল পাকিস্তান। সেই অনুযায়ী ঋণের কয়েকটি কিস্তিও এসেছিল দেশটিতে।
চুক্তিতে পাকিস্তানকে জ্বালানি পণ্যের ওপর ভর্তুকি প্রত্যাহারের শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। কিন্তু ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকার সেই শর্ত মানতে রাজি না হওয়ায় ঋণের কিস্তি স্থগিত করেছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।
২০২২ সালে পার্লামেন্টের বিরোধী সদস্যদের অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের সরকার বিদায় নেওয়ার পর পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হন শেহবাজ শরিফ। ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি আইএমএফের সেই চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ফের চেষ্টা শুরু করেন; কিন্তু এবার আইএমএফ সেই চুক্তিতে ফিরে আসার ক্ষেত্রে ব্যাপক সতর্ক অবস্থান নেয়।
আইএমএফের এই ঋণ ঝুলে থাকায় অন্যান্য বিদেশি সংস্থা থেকেও ঋণ বা সহায়তা আসা কমে যায়। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের মজুত কমতে থাকায় দিন দিন অর্থনৈতিক সংক প্রকট হওয়া শুরু করে পাকিস্তানে।
তারওপর গত বছর ব্যাপক বন্যায় পাকিস্তানের কৃষি ও অবকাঠামোগত খাত গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সংকট আরও তীব্র হতে থাকে। সেই সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই ডলারের বিপরীতে কমতে থাকে পাকিস্তানি রুপির মান। বর্তমানে পাকিস্তানে এক ডলারের বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ২৮৩ রুপি। এর আগে দেশটির ইতিহাসে কখনও রুপির মান এন নিম্ন হয়নি।
ডলারের মজুত কমে যাওয়া এবং তার বিপরীতে রুপির মান নামতে থাকায় একদিকে টালমাটাল হয়ে ওঠে দেশটির অর্থনীতি, অন্যদিকে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় নাভিশ্বাস উঠতে থাকে জনগণের।
সম্প্রতি পাকিস্তানের পরিস্থিতি এম পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে— বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার মত ডলারও ছিল না দেশটির। ফলে অদূর ভবিষ্যতে ‘ঋণখেলাপি’ দেশের আখ্যা পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল পাকিস্তান।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের জন্য কার্যত বিশাল এক স্বস্তি হয়ে এলো আইএমএফের এই ঋণ। আরও একটি ব্যাপার হলো, যেহেতু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলি ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে— অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকেও এখন ঋণ সহায়তা পাওয়া সহজ হবে পাকিস্তানের জন্য।
শুক্রবার এক বিৃবতিতে আইএমএফ জানিয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আশা করছে, এই ঋণ পাকিস্তানের ক্ষয়িষ্ণু বিদেশি মুদ্রার মজুতকে শক্তিশালী করা এবং অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে।
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: