
দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবশেষে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় শান্তির এক নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। সোমবার (১৩ অক্টোবর) মিসরের পর্যটননগরী শারম আল শেখে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে গাজা শান্তি চুক্তির গ্যারান্টি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে ৪টি দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার ও তুরস্ক। এই ঘোষণার মাধ্যমে দেশগুলো গাজা চুক্তির স্থায়িত্ব, বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
সম্মেলনে উপস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ দিনটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এক অসাধারণ দিন’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা কেবল একটি চুক্তি নয়, বরং একটি নতুন ভবিষ্যতের ভিত্তি রচনা করছি। গাজার মানুষ বহু বছরের যন্ত্রণা ও ধ্বংসের পর অবশেষে শান্তির ছোঁয়া পাবে।’
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ‘এই ঘোষণাপত্রে যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, প্রশাসনিক কাঠামো, মানবিক সহায়তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার স্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকবে। আমরা নিশ্চিত করব—এই চুক্তি টিকে থাকবে।’ তিনি দুবার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘এটি স্থায়ী হবে, এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’
এর আগে গাজায় জিম্মি ও বন্দি বিনিময়ের কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প এক ব্যতিক্রমী সফরে ইসরায়েল পৌঁছান। সেখানে তিনি ইসরায়েলি পার্লামেন্টে ভাষণ দেন এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘ধৈর্য, স্থিরতা ও নেতৃত্বের’ প্রশংসা করেন। এরপরই তিনি সরাসরি শারম আল শেখে গাজা শান্তি সম্মেলনে যোগ দেন।
ইসরায়েলের সংসদে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ‘৭ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত ইসরায়েল এমন এক যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, যার বোঝা কেবল এক গর্বিত ও দৃঢ় জাতিই বহন করতে পারে। এই ভূখণ্ডের মানুষ বছরের পর বছর ভয়, ক্ষতি ও বেদনার মধ্য দিয়ে গেছে—আজ অবশেষে তারা শান্তির স্বপ্ন দেখতে পারবে।’
ট্রাম্পের মতে, এই চুক্তি শুধু ইসরায়েলের জন্য নয়, ফিলিস্তিনিদের জন্যও এক নতুন সূচনা। তিনি বলেন, ‘গাজা, রামাল্লা, জেরুজালেম—যেখানেই মানুষ আছে, তারা যেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারে। এতদিন ধরে চলা এক বেদনাদায়ক দুঃস্বপ্নের এখন অবসান ঘটল।’
চুক্তির আওতায় যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা, প্রশাসনিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার রূপরেখা তৈরি হবে। স্বাক্ষরকারী দেশগুলো গাজার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং নতুন করে সহিংসতা প্রতিরোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
দীর্ঘ সংঘাত, রক্তপাত ও ধ্বংসের পর এই শান্তি চুক্তি গাজার মানুষকে নতুন আশার আলো দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল একে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়বদল হিসেবে দেখছে। তবে এই শান্তি কতটা স্থায়ী হবে—তা নির্ভর করবে সব পক্ষের আন্তরিকতা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের ওপর।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: