টঙ্গীর নিখোঁজ ইমাম মিলল পঞ্চগড়ে, দুই পা ছিল শিকল দিয়ে বাঁধা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ২৩:১২

ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের গাজীপুরের টঙ্গীর বিটিসিএল টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব ও পেশ ইমাম মো. মুহিবুল্লাহ মিয়াজীকে (৬৫) পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁর দুই পা শিকল দিয়ে একটি কলাগাছের সঙ্গে বাঁধা ছিল। পরে তাঁকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
 
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের সিতাগ্রাম হেলিপ্যাড এলাকায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের পাশ থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। তিনি গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় সকালে টঙ্গীর বাসা থেকে হাঁটতে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন।
 
এদিকে এ ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে পঞ্চগড়ে বিক্ষোভ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা শহরে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে পঞ্চগড় ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটি।
 
পুলিশ, স্থানীয় লোকজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ ফজরের নামাজের পর পঞ্চগড় সদরের সিতাগ্রাম হেলিপ্যাড এলাকায় ওই ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদের ইমাম শিহাব উদ্দিন। তিনি কাছে গিয়ে তাঁর দুই পায়ে শিকল দিয়ে বাঁধা দেখতে পান। পরে তিনি স্থানীয় লোকজনকে ডাকাডাকি করলে বেশ কয়েকজন জড়ো হন। এরপর ফেসবুকে ছবি দেখে ওই ব্যক্তি মুহিবুল্লাহ মিয়াজী বলে বুঝতে পারেন। পরে তাঁরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল করলে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
 
দুপুরে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যান। এ সময় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা-কর্মীরাও সেখানে যান।
 
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুহিবুল্লাহ মিয়াজী বলেন, ‘আমি গতকাল বুধবার সকাল সাতটার দিকে বাসা থেকে হাঁটতে বের হই। কিছুক্ষণ পর একটি অ্যাম্বুলেন্স তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায়। সেখান থেকে চার-পাঁচজন নেমে আমার মুখে কী যেন ধরে অ্যাম্বুলেন্সে তোলে। এরপর কালো কাপড় দিয়ে আমার চোখ বেঁধে ফেলে। পরে আমি অনুভব করি যে কাচের বোতলে পানি ভরে আমাকে মারধর করছে। আমার আগের অপারেশনের (অস্ত্রোপচার) জায়গাগুলোতে তাঁরা আঘাত করেছে। আমার মাকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে। মোবাইলটা নিয়ে গেছে। আমাকে ধরে আনা লোকজনকে বাংলাদেশি নাগরিক মনে হয়নি। তাঁরা প্রমিত বাংলায় কথা বলছিল।’
 
মুহিবুল্লাহ মিয়াজী আরও বলেন, ১১ মাস ধরে তাঁকে বেনামি চিঠি দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এসব চিঠিতে তাঁকে অখণ্ড ভারত ও ইসকনের পক্ষে কথা বলতে বলা হয়। বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক দলগুলো ও বিএনপি-এনসিপির বিরুদ্ধে কথা বলতে বলা হয়। সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবরের চিঠিতে তাঁকে কোরআন, ইসলাম, আল্লাহ শব্দ বলতে নিষেধ করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
 
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মো. মিজানুর রহমান বলেন, সকাল পৌনে সাতটার দিকে ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। তখন তিনি পুরোপুরি অচেতন ছিলেন না। তবে বিধ্বস্ত অবস্থায় থাকায় ভালোভাবে কথা বলতে পারছিলেন না। চিকিৎসা দিলে সকাল ৯টার পর থেকে ভালোভাবে কথা বলতে পারছেন। তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এ ছাড়া তাঁর আগে দুটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল বলে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন। তবে তাঁকে নেশাজাতীয় কিছু খাওয়ানোর মতো তেমন আলামত পাওয়া যায়নি। তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তবে এখন তিনি শঙ্কামুক্ত।
 
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, মুহিবুল্লাহ মিয়াজী নামের ওই ব্যক্তি গতকাল নিখোঁজের পর টঙ্গী থানায় একটি ডায়েরি হয়েছে বলে জেনেছেন। ইতিমধ্যে টঙ্গী থানায় বিষয়টি জানানো হয়েছে। সেখান থেকে পুলিশের একটি দল ও তাঁর স্বজনেরা পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: