হজের মূল পর্বে প্রার্থনায় মগ্ন হাজীরা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৫ জুন ২০২৫ ২১:৫৬

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিশ্বের ১.৫ মিলিয়নের বেশি মুসলিম হাজি আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হয়ে হজের সর্বোচ্চ পর্ব পালন করেছেন। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই প্রার্থনা ও কুরআন তেলাওয়াতের গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি, যেখানে হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের সময় শেষ খুতবা প্রদান করেছিলেন।
 
হাজিদের অনেকেই ভোরে আরাফাতে পৌঁছান যাতে সূর্যের প্রচণ্ড তাপ থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়। তারা ছাতা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে আগেই প্রস্তুতি নেন। তবে দিনের প্রধান অংশজুড়ে প্রার্থনা এবং কোরআন পাঠে অংশ নেন হাজিরা। সূর্যাস্তের পর হাজিরা আরাফাত থেকে মুজদালিফার দিকে রওনা হবেন, যেখানে তারা ‘শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ’-এর জন্য কংকর সংগ্রহ করবেন।
 
পাকিস্তান থেকে আসা ৩৩ বছর বয়সী হাজি আলী বলেন, “আমি টেলিভিশনে এই দৃশ্য দেখতাম আর ভাবতাম, যদি একদিন এখানে যেতে পারতাম। গত তিন বছর চেষ্টা করেছি। এখন খুবই আশীর্বাদধন্য মনে হচ্ছে।”
 
সৌদি সরকার এ বছর তীব্র গরমের কারণে হাজিদের সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তাঁবুতে অবস্থান করার পরামর্শ দিয়েছে। ইতিমধ্যে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়েছে। আরাফাতের পাদদেশে কুয়াশার মতো পানি ছেটানো ফ্যান এবং ঠাণ্ডা বাতাসের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
 
২০২৪ সালের হজে তীব্র গরমে ১৩০১ হাজির মৃত্যু হয়েছিল। এ বছর সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে সৌদি সরকার প্রচুর প্রস্তুতি নিয়েছে। ৪০টির বেশি সরকারি সংস্থার প্রায় আড়াই লাখ কর্মী হজ ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন। ৫০ হাজার বর্গমিটার ছায়াযুক্ত এলাকা বাড়ানো হয়েছে এবং ৪০০-র বেশি শীতলকরণ ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছে।
 
সিরিয়া থেকে আসা ৫৪ বছর বয়সী হাজি আদেল ইসমাইল বলেন, “আমি ভোরেই চলে এসেছি যাতে রোদ এড়াতে পারি। পরে আমি আমার তাঁবুতে প্রার্থনা করব।”
 
কায়রোর হাজি ইমান আবদেল খালেক বলেন, “আমি ১০ বছর ধরে হজ করতে চাচ্ছিলাম, আজ এখানে এসে আবেগে কেঁদে ফেলেছি। মনে হচ্ছিল কখনো সম্ভব হবে না।”
 
২০২৪ সালে যেসব হাজির মৃত্যু হয়েছিল, তাদের অনেকেই ছিল নিবন্ধনবিহীন। ফলে তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস ও তাঁবুর সুবিধা পাননি। এ বছর সৌদি সরকার নিবন্ধনবিহীন হাজিদের প্রবেশ ঠেকাতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে, চলছে নজরদারি ড্রোন, অভিযান ও টেক্সট অ্যালার্ট।
 
উল্লেখ্য, হজ পালনের জন্য প্রতি দেশকে নির্দিষ্ট কোটা অনুসারে অনুমতি দেয় সৌদি আরব। নির্ধারিত কোটা ছাড়াও অনেকে উচ্চ ব্যয়ের কারণে নিবন্ধন না করে অবৈধভাবে হজ পালনের চেষ্টা করেন, যা আইনি ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে।
 
হজ এবং উমরাহ থেকে প্রতিবছর বিলিয়ন ডলার আয় করে সৌদি সরকার, যা দেশটির অন্যতম প্রধান বৈদেশিক আয়ের উৎস।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: