সংগৃহীত ছবি
                                    
ভারতের দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামার একটি গ্রামে মসজিদে ঢুকে জোর করে 'জয় শ্রীরাম' বলিয়েছে সেনার কিছু জওয়ান বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইতিমধ্য়েই জম্মু ও কাশ্মীরের তিনজন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লা এবং গুলাম নবি আজাদ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে টুইট করেছেন। তারা ঘটনার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি করেছেন। তাদের দাবি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। এভাবে মসজিদে সেনা ঢুকে যাওয়ার ঘটনা কোনোভাবেই মানা যায় না বলে তারা জানিয়েছেন।
দ্য ওয়্যারের খবরে বলা হয়, গত শুক্রবার মাঝরাতের পর থেকে ঘটনার সূত্রপাত, যা চলে শনিবার সকাল পর্যন্ত। জাদুরা গ্রামের সাধারণ মানুষ একটি ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাত দেড়টা নাগাদ কিছু সেনা তাদের গ্রামে আসে। তারা সেনার ৫০ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের জওয়ান। সঙ্গে একজন অফিসার ছিলেন।
গ্রামবাসী মহম্মদ আলতাফ ভাট জানিয়েছেন, ''অফিসার গাড়ির বনেটের উপর বসেছিলেন। সেনা জওয়ানরা বলে, ওই এলাকায় নতুন দল পোস্ট করা হয়েছে। তারা মক ড্রিল করছেন।'' ভাট জানতে চান, ''গভীর রাতে মক ড্রিল কেন করা হচ্ছে!'' সকাল হলেই তো করতে পারতেন। এত রাতে গ্রামবাসীদের জাগানো ঠিক নয়। ভাট জাদুরা সিভিল সোসাইটির চেয়ারম্যান।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, সেনা এরপর গ্রামে ঢুকে ১০ জন যুবককে ধরে। পাঁচজনকে বেল্ট দিয়ে মারা হয়। তার মধ্যে ভাটের ছেলেও আছে।
ভোরবেলায় স্থানীয় একজন মসজিদে যান আজান দিতে। সেনা জওয়ানরাও তার পিছু যান বলে অভিযোগ। আরো অভিযোগ, তারা মসজিদে ঢুকে ওই স্থানীয় মানুষকে মাইকেই 'জয় শ্রীরাম' বলতে বাধ্য করে। যে পাঁচটি যুবককে বেল্ট দিয়ে মারা হয়েছিল, তাদেরও 'জয় শ্রীরাম' বলতে বাধ্য করা হয়।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় মানুষ সেনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। পরে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।
নাম জানাতে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, কিছুদিন আগে ওখানে সেনা ও জঙ্গিদের মধ্যে লড়াই হয়। তাতে সেনার জওয়ান মারা যান। তারপর থেকেই সেনার রোষানলে পড়েছেন তারা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সেনা অফিসার দ্য ওয়্যারকে জানিয়েছেন, ''তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। সব তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে। এরপর তারা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলবেন।''
সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, সেনা বা পুলিশের তরফ থেকে কোনো কথা বলা হচ্ছে না।
জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেছেন, ''ভয়ংকর ঘটনা। কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। আমি আশা করব, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে যেন তদন্ত করা হয়।''
পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি টুইট করে জানিয়েছেন, ''আমি স্তম্ভিত। যখন অমিত শাহ কাশ্মীরে ছিলেন, তখন এই ঘটনা ঘটেছে। অমরনাথ যাত্রার আগে এই ঘটনা তো উসকানি দেয়ার সামিল। আমি চাই, অবিলম্বে এই ঘটনার তদন্ত হোক।''
গুলাম নবি আজাদও সরকারকে অবিলম্বে তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, ''এই ধরনের ঘটনা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না।''
এদিকে মহারাষ্ট্রের নাসিকে আফান আনসারি ও তার বন্ধু গাড়িতে করে মাংস নিয়ে যাচ্ছিল। গোরক্ষকরা তাদের গাড়ি আটক করে। তাদের সন্দেহ হয়, গরুর মাংস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা দুই জনকে মারধর শুরু করে। গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে দুইজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। অন্যজনের আঘাত গুরুতর। চিকিৎসা চলছে।
পুলিশ ১০জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও দাঙ্গার অভিযোগ আনা হয়েছে।
সূত্র : পিটিআই/ দ্য ওয়্যার
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: