ছবি : সংগৃহীত
                                    করাচিতে সক্রিয় একটি বড় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয়ার দাবি করেছে পাকিস্তানের কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্ট (সিটিডি)। শনিবার তারা ঘোষণা করেছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং)-এর সঙ্গে যুক্ত ছয়জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও টিভি।
সিটিডি জানিয়েছে, ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় এই অভিযান পরিচালিত হয়। এতে ‘র’-এর হয়ে কাজ করা একটি পুরো নেটওয়ার্ক উন্মোচিত হয়েছে। সিটিডি’র অতিরিক্ত আইজিপি আজাদ খান সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০২৫ সালের ৮ জুলাই বাদিন এলাকায় ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তদন্তকারীরা আরও বিস্তৃত একটি নেটওয়ার্কের খোঁজ পান। এই নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছিলেন বিদেশে অবস্থানরত ‘র’ হ্যান্ডলার সঞ্জয়। তিনি সন্দেহভাজনদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতেন এবং পরিকল্পনা সাজাতেন।
আজাদ খান জানান, সন্দেহভাজনরা হত্যার আগে পাঁচ দিন বাদিন জেলার মাতলিতে নজরদারি চালায়। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় তিনজন গ্রেপ্তারকৃতকে ঘটনাস্থলে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যম এই হত্যাকে উদ্যাপন করেছে, যা ‘র’-এর সংশ্লিষ্টতা আরও স্পষ্ট করে। ভারতীয় হ্যান্ডলারের নাম সঞ্জয় সঞ্জীব কুমার। তিনি এক উপসাগরীয় রাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং দুই পাকিস্তানিকে এ অভিযানে নিয়োগ দেন। নেটওয়ার্কটির নেতৃত্বে ছিল সালমান নামের এক ব্যক্তি। তার দলে ছিল উমায়ের, সাজাদ, ওবায়েদ এবং শাকিল।
আজাদ খান জানান, ‘র’ এ অভিযানে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। যা ব্যাংক চ্যানেলসহ বিভিন্ন পথে স্থানান্তর করা হয়। সঞ্জয় ‘ফৌজি’ নামেও পরিচিত। উপসাগরীয় রাষ্ট্র থেকে টাকা পাঠাতেন তার সহযোগী সালমানের কাছে। পরে সালমান হায়দরাবাদে গ্রেপ্তারকৃতদের সঙ্গে দেখা করেন। তারা একটি স্থানীয় হোটেলে পাঁচ দিন অবস্থান করে হত্যার পরিকল্পনা করে মাতলিতে যায়। হামলার পর সালমান নেপালে পালিয়ে যায়।
তদন্তকারীরা নিশ্চিত করেছেন যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আসা অর্থ সন্ত্রাসী তহবিলের স্পষ্ট প্রমাণ। এই অনুসন্ধানের পর সন্ত্রাসী অর্থায়নের একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলো আমির আসগর, সাজাদ, ওবায়েদ, শাকিল, আরসালান এবং তালহা উমায়ের। তাদের কাছ থেকে একটি ৯ মিমি পিস্তল, একটি ৩০ বোর পিস্তল, মোবাইল ফোন ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। আজাদ খান আরও জানান, নিহত ব্যক্তি আবদুর রহমান ছিলেন স্থানীয় এক নরসুন্দর। সমাজসেবামূলক কাজের জন্য পরিচিত তিনি। তাকে ১৮ মে মাতলিতে দোকানের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। সন্দেহভাজনরা এর আগেই ১৩ মে থেকে তার ওপর নজরদারি চালাচ্ছিল। সিটিডি কর্মকর্তা আরও জানান, ‘র’ শুধু অভিযানের নির্দেশই দেয়নি, বরং একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকেও প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করেছে।
তদন্তে প্রমাণ মিলেছে যে একটি নিষিদ্ধ সংগঠনও এ হামলায় সহযোগিতা করেছে। আজাদ খান বলেন, এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসবাদের মধ্যে পড়ে। তিনি আরও যোগ করেন, পাকিস্তান এ বিষয়টি সব আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপন করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘র’-এর সম্পৃক্ততা পুরোপুরি প্রমাণিত হয়েছে। কারণ সন্দেহভাজনরা নিজেরাই স্বীকার করেছে, তারা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিল। তদন্তকারীদের কাছেও তাদের ভ্রমণ ইতিহাস রয়েছে।
আজাদ খান নিশ্চিত করেছেন, সন্দেহভাজনদের জবানবন্দি, উদ্ধারকৃত সামগ্রী, ব্যাংক লেনদেন এবং ‘র’-এর ভূমিকা নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। আরও গ্রেপ্তার হতে পারে।
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: