ফাইল ছবি
                                    ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা। এই হামলায় অভিযুক্ত ৩ আসামী খালিদ শেখ মোহাম্মদ, ওয়ালিদ মুহাম্মদ সালিহ মুবারক বিন আতাশ এবং মুস্তাফা আহমেদ আদম আল-হাওসায়িকে কিউবার নৌঘাঁটি গুয়ান্তানামো বেতে বছরের পর বছর ধরে বিচারের মুখোমুখি না করে আটকে রাখা হয়েছে। তবে এবার ৯/১১ হামলার পরিকল্পনাকারী খালিদ শেখ মোহাম্মদের সঙ্গে কৌঁসুলিরা একটি সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছেছেন। গতকাল বুধবার প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন এমনটা জানিয়েছে।
সাবেক আল–কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সবচেয়ে আস্থাভাজনদের একজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন খালিদ। ২০০৩ সালের মার্চে তিনি পাকিস্তানে আটক হন। এরপর তিন বছর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর গোপন কারাগারে ছিলেন খালিদ। ২০০৬ সালে তাঁকে কিউবার গুয়ানতানামো বেতে নৌঘাঁটিতে অবস্থিত কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
গতকাল পেন্টাগন বলেছে, প্রায় ২০ বছর পর খালিদ ও তাঁর দুই সহযোগী কৌঁসুলিদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন। সমঝোতার কারণে তাঁরা মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
জীবনীকারদের দাবি, খালিদ চরমপন্থী মহলে ‘মুখতার’ (নির্বাচিত ব্যক্তি) কিংবা ‘মস্তিষ্ক’ নামে পরিচিত। তবে তিনি ফ্রায়েড চিকেন পছন্দ করায় তাঁকে মজা করে বন্ধুমহলে কেউ কেউ কেএফসি নামেও ডাকেন।
খালিদের বর্তমান বয়স ৬০ বছরের কাছাকাছি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং প্রকৌশল বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
প্রশিক্ষিত এই প্রকৌশলী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কয়েকটি বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন।
খালিদের পরিকল্পনায় হওয়া অভিযানগুলোর মধ্যে ৯/১১-এর হামলাটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উড়োজাহাজ হাইজ্যাক করে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার এবং ওয়াশিংটনের পেন্টাগনে ওই হামলা চালানো হয়েছিল। ওই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ প্রাণ হারান। আরেকটি উড়োজাহাজ পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়।
১৯৯৩ সালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বোমা হামলায় সহযোগিতা করারও দাবি করেন খালিদ। ওই ঘটনায় ছয়জন নিহত হন। ২০০২ সালে ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লের শিরশ্ছেদ করেছেন বলেও দাবি তাঁর।
১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে কুয়েতে একটি পাকিস্তানি পরিবারে খালিদ শেখ মোহাম্মদের জন্ম। তবে তাঁর আদি নিবাস আফগানিস্তানের সীমান্ত–সংলগ্ন পাকিস্তানের বেলুচিস্তান অঞ্চলে।
খালিদের বক্তব্য অনুসারে, তিনি ১৬ বছর বয়সে জায়নবাদবিরোধী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগ দিয়েছিলেন। এর মধ্য দিয়ে সহিংস জিহাদে যুক্ত হন তিনি।
জীবনীকার রিচার্ড মিনিটার গণমাধ্যমকে বলেন, ১৯৮৩ সালে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান খালিদ। সেখানে তিনি কুয়েত থেকে যাওয়া আরবদের একটি ছোট দলের সঙ্গে থাকতেন।
১৯৮৭ সালে খালিদ আফগানিস্তানে যান এবং সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে মুজাহিদীন বিদ্রোহীদের হয়ে লড়াই করেন। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি আফগানিস্তানেই ছিলেন। এরপর মুসলিম যোদ্ধাদের হয়ে সার্বদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে খালিদ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় যান। ৯/১১ কমিশনের প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে বিন লাদেনের পাশাপাশি লড়াই করেছেন খালিদ। তবে লাদেনের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে উঠেছে আরও ১০ বছর পর। তখন খালিদ যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পরিকল্পনা শুরু করেন। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালানো হয়।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৮ সালের জুনে প্রথমবারের মতো খালিদকে প্রকাশ্যে হাজির করা হয়েছিল। তখন গুয়ানতানামোর এক শুনানিতে খালিদ বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি শহীদের কাতারে নাম লেখাতে চাইছি।’
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: