যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসিত হবে আফ্রিকার সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গরা : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:১৭

ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত

দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গদের প্রতিনিধিত্বকারী কয়েকটি সংগঠন শনিবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। পরিকল্পনায় দেশটির ‘নির্যাতিত’ শ্বেতাঙ্গ নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া ও পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গত শুক্রবার ট্রাম্প তাঁর সই করা এক নির্বাহী আদেশে বিস্তারিত তুলে ধরেন। নির্বাহী আদেশে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের বিরুদ্ধে সেদেশের কিছু শ্বেতাঙ্গ নাগরিকের ‘অধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ অভিযোগের শাস্তিস্বরূপ দেশটিকে সব ধরনের ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেন তিনি।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার দেশটির শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর সহিংস হামলা চালাতে দিচ্ছে। এ ছাড়া সরকার এমন একটি ভূমি বাজেয়াপ্তকরণ আইন প্রণয়ন করছে, যার অধীনে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই ‘জাতিগত সংখ্যালঘু আফ্রিকানদের কৃষিসম্পত্তি জব্দ’ করা যাবে।

তবে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর সমন্বিত হামলা চালানোর অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। সরকার বলেছে, নতুন ভূমি আইন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ণনা ভুল তথ্যে ভরা ও বিকৃত।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ।

‘আমরা কোথাও যাচ্ছি না’

গতকাল শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের সবচেয়ে প্রভাবশালী দুটি সংগঠন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের পুনর্বাসনের যে প্রস্তাব ট্রাম্প দিয়েছেন, তারা তা গ্রহণ করছে না।

এ দুই সংগঠনের একটি ‘সলিডারিটি’র প্রধান নির্বাহী ডার্ক হারম্যান বলেন, ‘আমাদের সদস্যরা এখানে কাজ করেন। তাঁরা এখানে থাকতে চান। তাঁরা এখানে থেকে যাবেন।’ তাঁদের এ গোষ্ঠী ২০ লাখ লোকের প্রতিনিধিত্ব করে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখানে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’

একই সংবাদ সম্মেলনে আরেক সংগঠন ‘আফ্রিফোরাম’–এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্যালি কারিয়েল বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট করে বলতে চাই: আমরা কোথাও যেতে চাই না।’

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ আফ্রিকায় ভূমির বণ্টন নিয়ে বিভেদ দীর্ঘদিনের। সেখানে শ্বেতাঙ্গ শাসনামলে হওয়া বৈষম্য দূর করার যে প্রচেষ্টা, রক্ষণশীল ডানপন্থীরা তার তীব্র সমালোচনা করেন।

ওই সমালোচনাকারীদের দলের একজন ট্রাম্প–ঘনিষ্ঠ ইলন মাস্ক। বিশ্বের শীর্ষ এ ধনীর জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। মাস্ক এখন ট্রাম্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী উপদেষ্টাদের একজন।

শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর সমন্বিত হামলা চালানোর অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। সরকার বলেছে, নতুন ভূমি আইন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ণনা ভুল তথ্যে ভরা ও বিকৃত। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা গত মাসে একটি বিলে সই করেন। বিলে বলা আছে, জনস্বার্থে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সরকার চাইলে শূন্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারবে।

ওই বিলের পক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার যুক্তি, বিলটি সরকারকে ইচ্ছেমতো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি দেয় না; বরং প্রথমে (সম্পত্তির) মালিকের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।

দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের এ পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি নিজের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ২ ফেব্রুয়ারি এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘এই পরিস্থিতি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ভবিষ্যৎ সব তহবিল বন্ধ রাখব।’

এ পোস্ট দেওয়ার পর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা ভয়ংকর কিছু করছেন, ভয়ানক কিছু। এখন সেসব নিয়ে তদন্ত হবে। আমরা একটি সিদ্ধান্তে আসব এবং দক্ষিণ আফ্রিকা কী করছে, আমরা সেটা খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত...তারা জমি কেড়ে নিচ্ছে, জমি বাজেয়াপ্ত করছে এবং তারা আসলে যা করছে, সেটা হয়তো এর থেকেও খারাপ কিছু।’

দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার বলেছে, বর্ণবাদী শাসন আমলে ১৯১৩ সালের আদিবাসী ভূমি আইন (নেটিভস ল্যান্ড অ্যাক্ট ১৯১৩)–এর মাধ্যমে হাজারো কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারকে জোর করে তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল।

ভূমির মালিকানা নিয়ে এ বিরোধ দক্ষিণ আফ্রিকায় বেশ সংবেদনশীল বিষয়। এ নিয়ে অধিকারের প্রশ্নে দেশটির ডানপন্থীরা এক বিন্দুতে জড়ো হয়েছেন। মাস্ক ও ডানপন্থী সাংবাদিক কেটি হপকিন্স শ্বেতাঙ্গ ভূমিমালিকদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: