ফাইল ছবি
                                    যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি গুটিয়ে আনার কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা সঙ্কট-জর্জরিত লেবানন ও বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
১৬ ফেব্রুয়ারি লেখা একই ইমেইলে ইউএসএআইডির ভারপ্রাপ্ত উপপ্রশাসক পিটার মারক্কো সাহায্যের জন্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও লেবাননের কাছ থেকে কৃতজ্ঞতার প্রকাশও দেখতে চেয়েছিলেন বলে মনে হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ইমেইলটির সত্যতা যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে।
মারক্কো ওই ইমেইলে ইউএসএআইডির মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বিষয়ক ব্যুরোর প্রধান টিম মেইজবার্গারকে একটি ‘অ্যাকশন মেমোর’ খসড়া করতে বলেছিলেন, যার মাধ্যমে সাহায্যের ওপর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ও লেবাননের ‘অস্বাভাবিক নির্ভরতার’ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর নজর কাড়া যায়।
“এতে (খসড়ায়) অবিলম্বে আমরা কী কী সুপারিশ পাঠাতে পারি তার রূপরেখার মাধ্যমে এই সংকেত থাকবে যে আমাদের সহানুভূতি থাকলেও ৫ নভেম্বর লোকজন সতর্কবার্তা পেয়েছে, এবং এ কারণে অনেককিছুই বদলে যাবে,” গত বছরের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিনকে উল্লেখ করে বলেন ইউএসএআইডির এ কর্মকর্তা।
“এই নির্ভরতা কমানোর সর্বোত্তম পদ্ধতি ও সময়সীমা এবং তাদের কিংবা অন্যান্য অংশীদারদের কাছ থেকে আমরা কী চাইতে পারি, তা প্রস্তাব করুন। আমাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই,” ইমেইলে এমনটাই লিখেছেন তিনি।
বিষয়টির সম্বন্ধে অবগত একটি সূত্র মারক্কোর এই ইমেইলের সত্যতা এবং ইউএসএআইডির এ কর্মকর্তা যে রোহিঙ্গা ও লেবাননের সহায়তা ধীরে ধীরে তুলে নিতে চেয়েছিলেন তা নিশ্চিত করেছে।
“এদের আরও সাহায্য প্রয়োজন আছে বলে মারক্কো বিশ্বাস করেন না,” বলেছে সূত্রটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ইমেইলটির প্রেরক ও প্রাপক, মারক্কো ও মেইজবার্গারের কাছে মন্তব্য চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দিক সাড়া পায়নি রয়টার্স।
মারক্কো যে মেমোটি বানাতে বলেছিলেন, মেইজবার্গ সেটি রুবিওকে পাঠিয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লেবানন ও ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর কাছে এখন কী পরিমাণ সহায়তা যাচ্ছে, রয়টার্স তাও বের করতে পারেনি।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তীব্র দমনপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এখনো শরণার্থী শিবিরেই দিন কাটাচ্ছে। এ শরণার্থীদের ৯৫ শতাংশ এখনও মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল, বলছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা।
লেবাননকে যুক্তরাষ্ট্র মানবিক ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি সামরিক সহায়তাও দিয়ে আসছিল।
মারক্কো এমন এক সময় এই ইমেইলটি পাঠিয়েছিলেন যখন তিনি ও ধনকুবের ইলন মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই) ইউএসএআইডিকে যত সম্ভব ছোট করে আনা এবং অবশিষ্টাংশকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার অভিযানে ছিলেন।
এরই মধ্যে তারা হাজারো কর্মী ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের বরখাস্ত করেছেন এবং শত শত কোটি ডলারের সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ নির্ভরশীল ছিল।
ইউএসএআইডির ৮০ শতাংশের বেশি কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে বলে সোমবার রুবিও জানিয়েছেন।
বিদেশে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে থাকা প্রধান এ সংস্থার কার্যক্রম ছোট করে আনার অভিযান শুরু হয় ২০ জানুয়ারি ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণ করার পরপরই।
রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এক নির্বাহী আদেশে ৯০ দিনের জন্য প্রায় সব সহায়তা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। এই সময়ের মধ্যে সহায়তা কর্মসূচিগুলো তার আমেরিকা প্রথম নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
পরে রুবিও ২৪ জানুয়ারি রোহিঙ্গা শরণার্থী ও লেবাননে খাদ্য সহায়তার ক্ষেত্রে এই স্থগিতাদেশে ছাড় দেন, বলেছে সূত্রটি।
তারও চারদিন পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ছাড়ের তালিকায় আসে সকল জীবন-রক্ষাকারী ওষুধ, চিকিৎসা সেবা, খাদ্য ও আশ্রয় সহায়তা।
এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বেশি সহায়তাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রই; ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত তারা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় প্রায় ২৪০ কোটি ডলার দিয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের বাইরে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড ও অন্যত্রও কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিসংঘ চলতি মাসের শুরুর দিকে সতর্ক করে বলেছিল, আরও অর্থ তুলতে না পারলে তারা এপ্রিল থেকেই বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্যের পেছনে খরচ মাসিক সাড়ে ১২ ডলার থেকে ৬ ডলারে নামিয়ে আনবে।
শুক্রবার কক্সবাজার গিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, শরণার্থীদের রেশনে কাটছাঁট রোধে জাতিসংঘ যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: