
বোস্টনে দায়ের করা এ মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টি বলেছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যা করেছে, তা আইনের ‘নির্লজ্জ লঙ্ঘন’। বিবিসি লিখেছে, হোয়াইট হাউজের সঙ্গে আমেরিকার অন্যতম অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরোধ যে এখন চরমে, পাল্টাপাল্টি এ পদক্ষেপে তাই বোঝা যাচ্ছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় (ডিএইচএস) বলেছিল, আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রশাসন হার্ভার্ডের ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম সার্টিফিকেশন’ বাতিল করেছে। "এটি সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা হবে,” বলেছিলেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী ক্রিস্টি নোম।
ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, এন্টিসেমেটিজমের বিরুদ্ধে লড়াই এবং নিয়োগ ও ভর্তি প্রক্রিয়া বদলাতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। “কলমের এক খোঁচায় সরকার হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী বহরের এক চতুর্থাংশকে মুছে দিতে চাইছে, এ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে,” মামলায় দেওয়া যুক্তিতে বলেছে হার্ভার্ড।
আদালতের কাছে আবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়টি ডিএইচএসের বৃহস্পতিবারের পদক্ষেপ আটকে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। “এই বেআইনি ও অযাচিত কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমরা,” এক চিঠিতে এমনটাই লিখেছেন হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্বার।
“বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া সরকারের চলমান পদক্ষেপের অংশ, যা হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে একহাত নেয়ার জন্য করা হচ্ছে, কেননা আমরা আমাদের একাডেমিক স্বাধীনতা হারাতে চাইনি এবং আমাদের পাঠ্যক্রম, শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের ওপর ফেডারেল সরকারের অবৈধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হইনি,” বলেছেন তিনি।
এপ্রিলেই ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাধারী কয়েকজনের তথ্য চেয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, তা না দিলে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ হারাতে পারে।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে ফেরার পর থেকেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তার প্রশাসনের টানাপড়েন শুরু হয়। হার্ভার্ডের পাশাপাশি নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও কথিত ‘এন্টিসেমেটিজমের’ অভিযোগে ট্রাম্প প্রশাসনের নিশানায় পরিণত হয়েছে।
রিপাবলিকান প্রশাসনের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘চরম বামপন্থি, মার্ক্সবাদী ও মার্কিন-বিরোধী’ চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে পড়েছে।
হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, তারা শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ায় জাতিগত পরিচয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ দিয়ে ইহুদি শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের শিকার হতে দিচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান এবং চুক্তি জব্দ বা বাতিল করে।
সবশেষ গত সোমবার ইহুদি শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও জাতিগত হয়রানির অভিযোগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ ৬ কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা মন্ত্রণালয় (এইচএইচএস)।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: