
গত কয়েক বছরে চার্লি কার্কের অনুষ্ঠানে আমার কয়েকবার অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। তাঁকে আমার সব সময় ভদ্র, শ্রদ্ধাশীল ও বিভিন্ন ধ্যানধারণার প্রতি আন্তরিকভাবে আগ্রহী একজন মানুষ বলে মনে হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে আমাদের মতপার্থক্য ছিল, তা–ও তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনতেন।
চার্লি বাক্স্বাধীনতার একজন দৃঢ় সমর্থক ছিলেন এবং তরুণ প্রজন্মকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন—রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকলেও বাক্স্বাধীনতা ও সংলাপের মূল্য বেশ গভীর।
মাত্র ৩১ বছর বয়সে চার্লি দেশের রক্ষণশীল তরুণদের সবচেয়ে বড় সংগঠনের জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। ফলে এ দেশের ভবিষ্যতের রক্ষণশীল আন্দোলনে তাঁর প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। এমনকি তিনি রিপাবলিকান পার্টিকে প্রভাবিত করার মতো শক্তিশালী অবস্থানেও পৌঁছে গিয়েছিলেন।
বিগত রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারের সময় আমি নিজেই লক্ষ করেছি, এ দেশের তরুণেরা স্বাধীনতা, শান্তি ও সমৃদ্ধির আদর্শে সত্যিই অনুপ্রাণিত।
গত সপ্তাহে চার্লি কার্কের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমরা আসল গল্পটি জানতে পেরেছি, তা আমি বিশ্বাস করি না। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই) ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার দেওয়া বিবরণে ব্যাপক অসংগতি দেখা যাচ্ছে। এসব সংস্থার বর্ণনাকে আমার বারবার পাল্টে যাওয়া কাহিনি বলে মনে হয়েছে, যা কোনো অর্থই বহন করে না।
কার্কের কাছের কিছু ব্যক্তি জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তাঁর অবস্থান ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছিল। প্রচলিত নব্য রক্ষণশীল যুদ্ধংদেহী (মিলিটারিজম) মনোভাব থেকে সরে এসে তিনি আরও অহস্তক্ষেপমূলক (নন-ইন্টারভেনশনিস্ট) নীতির দিকে ঝুঁকছিলেন।
টাকার কার্লসন সম্প্রতি জানিয়েছেন, ইরানে হামলা চালানো থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিরত রাখতে কার্ক নিজেই হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
এ ছাড়া রক্ষণশীল পডকাস্টার (রাজনৈতিক ভাষ্যকার) ও চার্লি কার্কের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ক্যান্ডেস ওয়েন্স তাঁর নিজের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কার্ক সম্প্রতি ‘আধ্যাত্মিক সংকটের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আগের যুদ্ধংদেহী সমর্থন থেকে সরে এসে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অহস্তক্ষেপবাদী’ পথের দিকে ঝুঁকেছিলেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অস্থিরতায় তিনি এদিকে এগোচ্ছিলেন।
প্রশ্ন থেকে যায়, চার্লি কার্ক কি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এমন কোনো শক্তির দ্বারা নিহত হয়েছেন, যাঁরা তাঁর মতো এমন এক প্রভাবশালী নেতার দৃষ্টিভঙ্গির ওই রকম পরিবর্তন মেনে নিতে পারছিলেন না। তবে কী হয়েছে, তা আমরা এখনো জানি না।
যেমনটি বলেছি, তেমন কিছু যদি ঘটেও থাকে, তা শান্তির ধারণাকে এগিয়ে নেওয়া ঠেকাতে যাঁরা মরিয়া, তাঁরা অবশ্যই আড়াল করতে চাইবেন। যেমনটি তাঁরা অতীতে অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে করেছেন।
আমার সাম্প্রতিক বই ‘দ্য সারাপটিশস কু: হু স্টোল ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশন?’-এ আমি এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এতে আমি জন এফ কেনেডি, রবার্ট এফ কেনেডি, মার্টিন লুথার কিংসহ বেশ কিছু হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেছি।
১৯৬০–এর উত্তাল দশকে তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল। কারণ, তাঁরা প্রচলিত অবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং শীতলযুদ্ধ চলাকালে সাংঘর্ষিক অবস্থান নেওয়া থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন।
একদল নৈরাজ্যবাদী ছিলেন গত শতকের এসব শান্তিপ্রিয় নেতার প্রকৃত হত্যাকারী, যাঁরা সত্যে বিশ্বাস করতেন না। তাঁরা কেবল শক্তিতে বিশ্বাস করতেন, যে শক্তি বন্দুকের নল থেকে আসে। বহুমতের বাজারে প্রতিযোগিতা করার বদলে তাঁরা যেকোনো চ্যালেঞ্জকে নিঃশেষ করতে চাইতেন। আর এভাবেই আমাদের দেশের অন্য কোনো পথে হাঁটার সম্ভাবনাকেই মুণ্ডুপাত করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট কেনেডির হত্যাকাণ্ডের ৬০ বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। তা সত্ত্বেও মার্কিন জনগণের বিশাল অংশ তাঁর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সরকারি ভাষ্যকে বিশ্বাস করে না। মিথ্যার দেয়াল টপকানো অসম্ভব বলে মনে হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো একদিন সত্য বেরিয়ে আসবে।
এ কথা যদি সত্যি হয় যে চার্লি কার্ক তাঁর সংগঠনকে এমন এক পররাষ্ট্রনীতির দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত। তাহলে তাঁর হত্যাকাণ্ড এখন যতটা দুঃখজনক বলে মনে করা হচ্ছে, তা সেটার চেয়ে আরও বেশি শোচনীয় হবে।
তবে মনে রাখতে হবে, যে ধ্যানধারণার সময় উপস্থিত হয়েছে, কোনো সেনাবাহিনী বা আততায়ী তা থামাতে পারবে না। আর এটাই হয়তো তাঁর রেখে যাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার। শান্তিতে ঘুমাও (চার্লি কার্ক)।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: