
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য একটি বিল দেশটির পার্লামেন্টে প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এর বিরোধিতা করেছেন। হুমকি দিয়ে তিনি বলেছেন, এমনটি ঘটলে যুক্তরাষ্ট্রের সব সমর্থন হারাবে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে গতকাল বুধবার ২৫–২৪ ভোটে বিলটি অনুমোদন পায়। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার জন্য চার ধাপে ভোটাভুটির প্রয়োজন। বুধবার ছিল এর প্রথম ধাপ। বিলটি আরও আলোচনার জন্য নেসেটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে যাবে। এদিন পশ্চিম তীরে ইহুদিদের মালে আদুমিম বসতি ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার একটি বিলও ৩১–৯ ভোটে অনুমোদন পেয়েছে।
বুধবার অনুমোদন পাওয়া প্রথম বিলটি পার্লামেন্টে তোলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট সরকারের বাইরে থেকে। এই বিলে নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টির সমর্থন নেই। যদিও জোট সরকারে থাকা ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন–গভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোতরিচের দল বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
কয়েক বছর ধরেই নেতানিয়াহুর জোটের কয়েকজন সদস্য পশ্চিম তীরের কিছু অংশ ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলছিলেন। তাঁদের ভাষ্য, ওই এলাকাগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের ঐতিহাসিক সংযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ১৯৬৭ সালে আরব দেশগুলোর সঙ্গে যুদ্ধের সময় ইসরায়েল আইন অনুযায়ী পশ্চিম তীর দখল করেনি। তাই এই দখলকে বৈধতা দেওয়ার জন্য একটি আইন প্রয়োজন।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি এই দখলদারিকে বরাবরই অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ এবং বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ। ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) এক রায়ে বলা হয়, পশ্চিম তীরসহ ফিলিস্তিনের অন্য ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারি অবৈধ। সেখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব ইসরায়েলি অবৈধ বসতি এবং সেনাদের সরিয়ে নিতে হবে।
‘ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারাবে’
ইসরায়েলের পার্লামেন্টে এমন সময় বিলটিতে অনুমোদন দেওয়া হলো, যখন ট্রাম্পের ২০ দফা ‘শান্তি’ পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজায় যুদ্ধবিরতি চলছে। মাসখানেক আগেই তিনি বলেছিলেন, পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হতে দেবেন না। আর এই বিল অনুমোদনের সময় ইসরায়েল সফর করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।
গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতিকে এগিয়ে নিতে বৃহস্পতিবার জেডি ভ্যান্স ছিলেন ইসরায়েলের তেলআবিব শহরে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল পশ্চিম তীর নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যে নীতি, তাতে পশ্চিম তীরকে যুক্ত করার বিষয়টি নেই। তাই এটি যুক্তরাষ্ট্রেরও নীতি হবে না।’
আজ সাময়িকী টাইমে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে একই কথা বলেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, ‘এমনটি (পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করা) ঘটবে না। কারণ, আমি এ নিয়ে আরব দেশগুলোকে কথা দিয়েছি। আরব দেশগুলো আমাদের বড় সমর্থন দিয়েছে। এমনটি ঘটলে যুক্তরাষ্ট্রের সব সমর্থন হারাবে ইসরায়েল।’
পার্লামেন্টে এই বিল অনুমোদনের মাধ্যমে রাজনৈতিক বিরোধীরা নেতানিয়াহু সরকারকে বিপত্তিতে ফেলতে চাইছে বলে মনে করে লিকুদ পার্টি। ট্রাম্প–নেতানিয়াহু সম্পর্ক নষ্টের জন্য এই ভোট হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে দলটি। আর ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেয়ন সার বলেছেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার কথা ভেবে সরকার এখন এই ভোটাভুটি চায়নি।
বিভিন্ন দেশের নিন্দা
গাজায় টানা দুই বছর ধরে ইসরায়েলি নৃশংসতার পর ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এরপরও উপত্যকাটিতে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। চুক্তি অনুযায়ী ত্রাণও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গতকাল একজনসহ দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬৮ হাজার ২৮০ জন নিহত হয়েছেন।
এরই মধ্যে পশ্চিম তীর ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার বিল অনুমোদনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, গাজা ও পশ্চিম তীর ফিলিস্তিনের অংশ। এখানে ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই। আর এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরায়েলের ‘ঔপনিবেশিক দখলদারির কুৎসিত রূপ’ প্রকাশ পেয়েছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবচেয়ে কড়া ভাষায় ইসরায়েলের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। একে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছে দেশটি। ইসরায়েলের এ পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব। আর নিন্দা জানিয়ে জর্ডান বলেছে, এই পদক্ষেপ দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ভিত্তি নষ্ট করবে।
যদিও বিল অনুমোদনে আগে থেকেই পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের পূর্ণ সার্বভৌমত্ব রয়েছে বলে মনে করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্যালেস্টিনিয়ান ফোরাম ফর ইসরায়েলি স্টাডিজের গবেষক ওয়ালিদ হাব্বাস। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, এই বিল অনুমোদন বর্তমান চিত্রপটে বড় কোনো পরিবর্তন আনবে না। কারণ, দখলদারির মাধ্যমে ইসরায়েল এরই মধ্যে পশ্চিম তীরে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব ভোগ করছে। তবে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ওপর এই বিল অনুমোদনের প্রভাব পড়বে।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: