সংগৃহীত ছবি
                                    
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবন যাপনের ব্যয় বৃদ্ধির মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক সংকটের আরও অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যে সম্প্রতি বিএনপি বিশাল বিক্ষোভ র্যালি করে যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। এতে রাজপথে নেমে এসেছেন বাংলাদেশের দলীয় লাখো নেতাকর্মী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ যত গুরুত্বর রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে বর্তমানের টালমাটাল অবস্থা তার অন্যতম। এ খবর দিয়ে অনলাইন আল জাজিরা ‘হোয়াই ইজ দ্য বাংলাদেশি অপোজিশন প্রটেস্টিং এগেইনস্ট শেখ হাসিনা’স গভর্নমেন্ট?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হতে পারে আগামী জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করছে বিএনপি এবং নির্বাচন দাবি করছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এ দাবিতে শুক্রবার ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে বিএনপি। তাতে মহাসচিব মির্জা ফজরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, বিএনপির নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির অভিযোগে কার্যত গৃহবন্দি। এই দলটি এর আগে অনেকবার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ভোট কারচুরি অভিযোগ করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বার বার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী কঠোরভাবে সব নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাকে কর্তৃত্ববাদী এবং মানবাধিকার লংঘনকারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কথা বলার স্বাধীনতা ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমিয়ে রাখার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। তার অধীনে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা হাজার হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে আটক করেছে বলে অভিযোগ আছে। অভিযোগ আছে কয়েক শত মানুষকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের। কয়েক শত নেতাকর্মী ও সমর্থককে গুমের অভিযোগ আছে। এসব অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালে র্যাব ও এর সিনিয়র সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এখন পর্যন্ত বিরোধীদের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার। তারা বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক। ১৫ বছর বয়সী এ সম্পর্কিত সাংবিধানিক ধারাকে ২০১১ সালে বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। এই বিধান অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হতো অনির্বাচিত নির্দলীয় একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের কাছে। তারাই পার্লামেন্ট নির্বাচন তদারকি করতো।
এ মাসের শুরুতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক ক্যাম্পেইনার ইয়াসাসমিন কাভিরত্নে বলেছেন, বাংলাদেশে উত্তেজনা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা এলার্মিং। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও ভিন্ন মত প্রকাশ করতে দেয়া উচিত জনগণকে। তাদের কণ্ঠকে গলাটিপে ধরে সরকার এই বার্তাই দিচ্ছে যে, দেশের ভিতরে ভিন্ন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে সহ্য করা হবে না। এ সময় তিনি পুলিশকে সংযত আচরণ করার আহ্বান জানান।
যেহেতু বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ আছে, তাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দাবি জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সপ্তাহের প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ১৪ জন কংগ্রেসম্যান জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কাছে একটি চিঠি লিখেছেন। তাতে তারা বাংলাদেশে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এবং নিরপেক্ষভাবে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন। ওদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: