গ্রাফিক্স 
                                    
বাংলাদেশের বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিদায় নিয়েছে। নাম বদলে সাইবার নিরাপত্তা আইন করেছে সরকার। দেশি-বিদেশি আপত্তির মুখেও সাইবার সিকিউরিটি আইনটি পাশ করেছে বাংলাদেশ সংসদ। 
নতুন আইনের ৬০টি ধারার ৪টি অজামিনযোগ্য। এর অধিকাংশ অপরাধ কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের সাথে জড়িত, যেখানে দক্ষ অপরাধীদের অপরাধ ও সাজার বিষয়ে বলা হয়েছে। আর জামিনযোগ্য করা হয়েছে ১৪টি ধারা। সেখানে ডিজিটাল মাধ্যমে লেখা, প্রকাশ, প্রচার এ সংক্রান্ত অপরাধে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারাগুলো দিয়েই মানুষের মাঝে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে, যা নতুন আইনেও থেকে গেলো।
সাইবার সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ধারার চেয়ে ভয়হীন মত প্রকাশ ও স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করার ধারাই বহাল রাখা হয়েছে নতুন আইনে, অভিমত বিশ্লেষকদের।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বা ভিন্নমতের স্বাধীনতা, এগুলো প্রকাশের ক্ষেত্রে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছিল, নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছিল; সেগুলো প্রায় হুবহু রয়ে গেছে। শুধুমাত্র পরিবর্তন হয়েছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাজার পরিমান। বাস্তবে দুটোর মধ্যে গুণগত কোনো পার্থক্য নেই। এটাকে বলা যায় শুধু খোলস পরিবর্তন।
বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মতো এই আইনেও অপপ্রয়োগ হওয়ার সুযোগ রয়ে গেছে। তিনি বলেন, এই আইনের মিসইউজ-অ্যাবিউজ হতে পারে। এটা খোলা রাখা আছে। এই অ্যাক্টের কিছু অগ্রগতি আছে। অগ্রগতির একটা হচ্ছে, অধিকাংশ ধারা এখন জামিনযোগ্য করা হয়েছে।
দেশি-বিদেশি আপত্তির মুখে বাতিল করা হয় পূর্বের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। তেমনি সাইবার সিকিউরিটি আইনকেও জনবিরোধী ও সাংবাদিকতার পরিপন্থী বলে চিহ্নিত করেছে দেশি-বিদেশি সংগঠন। আইনটি পাশ না করতে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এর অপপ্রয়োগ হবে না বলে আশ্বাস দেয়া হয়। জানানো হয়, জামিনের বিধান বাড়ানোর পাশাপাশি কমানো হয়েছে সাজাও।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই আইনে জব্দ করা বা কাউকে অ্যারেস্ট করার এখতিয়ার দেয়া আছে। বিচারিক জবাবদিহিতা বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে এটা করার সুযোগ আছে। অতএব এটা সম্পূর্ণ কর্তৃত্ববাদী একটা ধারা।
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, হঠাৎ করে একজন পুলিশের মনে হলো, কোনো একটা চ্যানেলের নিউজডেস্কে এমন কিছু রিপোর্ট লেখা হচ্ছে, যেটা জাতির জন্য ক্ষতিকর। শুধু এই কারণেই সে ওই চ্যানেলের অফিসে ঢুকতে পারবে। যার কারণে আইনটি প্রেস কাউন্সিলে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম আমারা। সবচেয়ে বড় আতঙ্কের জায়গাটা হলো এই ধারাটা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রেও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আইন আছে। তবে সেগুলো সরাসরি সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত টেকনিক্যাল বিষয়াদির অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য। সেখানে ডিজিটাল মাধ্যমে মত প্রকাশকে অপরাধ হিসাবে দেখা হয় না।
ড. ইফতেখারুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা ও ভিন্নমতের স্বাধীনতাকে খর্ব করার যে প্রেক্ষিত তৈরি হয়েছে, সেটা আরও বেশি ঘনীভূত হচ্ছে এবং হবে। এর ফলে জাতীয়ভাবে নিরাপত্তাহীনতা যেমন বাড়বে, একইভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর সমালোচনা শুনতে হবে।
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মামলাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখবেন, সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আমি বুঝতে পারছি, আমার আশপাশে সাপ হাঁটছে। আমাকে বলা হলো যে, সাপ আছে কিন্তু ছোবল দেবে না। কিন্তু সাপটা কখন ছোবল দেবে, সেটা তো আমি বুঝতে পারছি না। যেমন পুলিশ অফিসারের মনে হলেই সে ছোবল দেবে।
২০০৬ সালে সাইবার অপরাধ দমনে আইসিটি অ্যাক্ট করা হয়। সেখানে থাকা ৫৭ ধারাও মত প্রকাশে বাধাগ্রস্থ করে বলে আপত্তির মুখে বাতিল করা হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, সেই ৫৭ ধারাকে আরও বিস্তৃত করে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে লিপিবদ্ধ করা হয়। জামিনযোগ্য, দণ্ড ও জরিমানার বদল করে সেই ভয়ের ধারাগুলো সাইবার নিরাপত্তা আইনেও রাখা হয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: