গ্রাফিক্স
                                    বাংলাদেশের বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচার নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ বিভাগ (সিআইডি)। এস আলম গ্রুপ হুন্ডিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে প্রাথমিক তথ্য ধরে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে; যা অন্তত তিনটা পদ্মাসেতুর খরচের সমান। এই অঙ্ক আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা সিআইডি।
পাচারের অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে দেশটির ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের সমন্বয় করে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। সেই উদ্যোগ নিতে হবে।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অর্থপাচার করেছে এস আলম গ্রুপ। এর সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তি, গোয়েন্দা সংস্থা, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা জড়িত ছিল। তাঁদের পাচার হওয়া অর্থ ও ব্যক্তিদের দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য জাতীয়, আন্তর্জাতিক এবং যে অর্থপাচার করেছে সেই দেশের আইন অনুসরণ করতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। এই সরকারের বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তাঁরা ইচ্ছে করলেই পারবে।
তিনি বলেন, অর্থপাচারকারীদের বিচারের আওতায় এনে নজির স্থাপন করতে হবে। যত টাকা পাচার করেছে তার তিন গুন জরিমানার বিধান আইনে রয়েছে, তাই করতে হবে। এছাড়াও তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে তাহলে এই অর্থপাচার প্রতিরোধ করা যাবে।
যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে পাচারে সুরক্ষা দিয়েছে তাঁদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, এস আলম গ্রুপের মালিক মো. সাইফুল আলমসহ তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, বিদেশে অর্থ পাচার, ওভার ইনভয়েস ও আন্ডার ইনভয়েস এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনা অপরাধের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাই তাঁদের সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইমের এক কর্মকর্তা বলেন, এস আলম গ্রুপ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাসসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে অর্থ পাচার করেছে। সেখানে গ্রুপের নিজের ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ ক্রয় ও ব্যবসায় পরিচালন করেছেন। পাচারকৃত অর্থে সিঙ্গাপুরে ২৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা (২ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার) পরিশোধিত মূলধনের ক্যানালি লজিস্টিক প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাছাড়াও ভুয়া নথি তৈরি করে, জাল জালিয়াতি এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিদেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগের নামে নামে-বেনামে ৬টি ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেছে এবং বিদেশে পাচার করেছেন।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, বিদেশ শেল কোম্পানি (নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান) খুলে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৮ হাজার কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে বিদেশে পাচার করেছেন। এস আলম তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমসহ তাঁদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় অর্থপাচার করেছে।
সিআইডি ইতিমধ্যে এস আলমের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চেয়েছে। সেই তথ্য পাওয়ার পর কোন কোন দেশে অর্থ পাচার করেছে সেই দেশ শনাক্ত করে সেই সব দেশে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, এস আলম গ্রুপের শীর্ষ কর্তারা আত্মগোপনে রয়েছেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এস আলমের সম্পদ কাউকে না কেনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় এস আলমের কারখানায় লুটের ঘটনা ঘটেছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সিআইডির অর্গানাইজ ক্রাইমের প্রধান ডিআইজি কুসুম দেওয়ান জানান, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থপাচার অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি ঘটনাই তদন্ত করা হবে।
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: