ফাইল ছবি
                                    বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব বা পাসপোর্টের তথ্য চেয়েছে দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব তথ্য চেয়ে গত সোমবার সংস্থাটির মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. মোকাম্মেল হকের সই করা চিঠিটি সব মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ১ জানুয়ারি একই বিষয়ে তথ্য চেয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগে চিঠি দিয়েছিল দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করা সংস্থাটি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের অভিযোগ পড়েছিল দুদকে। সে অভিযোগের অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরো অনেকের নাম চলে আসে। তখন দুদক নড়েচড়ে বসে। অনুসন্ধানকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তার দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া যায়।
সোমবারের চিঠিতে দুদক জানিয়েছে, অসাধু সরকারি কর্মচারীরা তথ্য গোপন করে বাংলাদেশ ব্যতীত ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ ও ব্যবহার করছেন। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে শাস্তি অথবা আইনগত পদক্ষেপ এড়ানোর লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে সেসব দেশে অবস্থান করছেন। এভাবে সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা আইনি পদক্ষেপ থেকে রক্ষাসহ নিজেদের অপকর্ম ঢেকে রাখার প্রয়াস চালাচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশের পাশাপাশি একই সঙ্গে অন্যান্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। অথচ তাদের এ ধরনের কার্যকলাপ সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪০ ধারার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
দুদক পরিচালিত বিভিন্ন অনুসন্ধানকালে তথ্য পাওয়া গেছে, সরকারি কর্মচারীদের এমন একাধিক পাসপোর্ট গ্রহণের অন্যতম লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদ গোপন করে বিদেশে পাচার ও ভোগ করা। তাদের এমন কার্যকলাপ দেশে দুর্নীতি প্রসারে ভূমিকা রাখছে এবং দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাছাড়া ভিন্ন একটি দেশে নাগরিকত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের সরকারি চাকরির নৈতিক দায়দায়িত্বের প্রতি তাদের অনাগ্রহ পরিলক্ষিত হয়, যা কোনোক্রমেই বাঞ্ছনীয় নয়।
দণ্ডবিধির ২১ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ২ ধারা, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ১১০ ধারাসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সব আইন অনুযায়ী প্রতিরক্ষা বিভাগে কর্মরত সব কমিশন্ড অফিসার, আদালতে কর্মরত কর্মচারী ও বিচারক, সরকারি রাজস্ব খাত থেকে বেতনভুক্ত সব কর্মচারী, সব স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত, আধা সরকারি বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিতে কর্মরত সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বিবেচিত হন। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় পাবলিক সার্ভেন্ট অথবা তাদের পোষ্যরা কর্তৃক দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের বিষয়ে রক্ষিত তথ্যাদি পর্যালোচনা করা একান্ত আবশ্যক।
ক্ষমতার পালাবদলের পর দুদক পুনর্গঠন করা হয়েছে। কমিশন গত ২৩ ডিসেম্বর বিদেশী নাগরিকত্ব নিয়ে যারা মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তা দুদককে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: