বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান : সংগৃহীত ছবি
                                    
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেছেন, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য কতটা অর্জন করা যাবে সেটা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনার সুযোগ থাকলেও এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় মাত্রায় আনতে সময় লাগবে। আর সমকালীন মূল্যস্ফীতি যাতে দীর্ঘমেয়াদে চেপে না বসে সেজন্য মুদ্রানীতিকে যথার্থ ইঙ্গিত দিতে হবে। বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য অর্জন বহু অংশে নির্ভর করছে মুদ্রানীতির সঙ্গে বাজেটের সমন্বয়ের ওপর।
১৬ জুন, শুক্রবার বাংলাদেশের প্রেস ক্লাবে অ্যাডুকেশন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি) কর্তৃক আয়োজিত ‘সমৃদ্ধ ও সুষম বাংলাদেশ নির্মাণ : বাজেট ২০২৩-২৪’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আতিউর রহমান বলেন, ”বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি। এ মূল্যস্ফীতিকে ৬ শতাংশে ধরে রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতার সময় যখন দেশের মানুষ মূল্যস্ফীতির কারণে হিমশিম খাচ্ছেন, তখন মূল্যস্ফীতি এ মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তা নিশ্চয়ই একটি বড় অর্জন হবে। তবে বিষয়টি খুব সহজ হবে না। এজন্য নীতিমালা নিতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি শুধু বাজেট দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতিরও বিরাট ভূমিকা পালন করতে হয়। আশা করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি করবে।”
তিনি বলেন, নাগরিকদের মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবেন নাগরিকরা। এছাড়া আসন্ন বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের থেকে ৯ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৪ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। ভর্তুকিতে কাটছাঁটের চাপ থাকার পরও জনজীবনে স্বস্তি আনতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বৃদ্ধি জনস্বার্থের প্রতি সংবেদনশীলতার প্রতিফলন হিসেবে দেখা উচিত। বিশেষ করে কম দামে কোটি মানুষকে কার্ডের মাধ্যমে যে খাদ্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে, এটি মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার জন্য একটি বড় উদ্যোগ। এটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এমন চ্যালেঞ্জিং সময় এর আগে ১৯৭১ সালে একবার এসেছিল। এখন আবার এমন একটি সময়ের মধ্য আমরা আছি। এ চ্যালেঞ্জে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ভূ-তাত্ত্বিক বাস্তবতা। এর কারণে সারা পৃথিবী এখন টালমাটাল অবস্থার মধ্যে আছে। এর মধ্যে আমাদের নিজস্ব যে অবস্থান, নিজের যে শক্তি, আমরা যে ধীরে ধীরে একটি শক্ত পাটাতনের ওপর আমাদের অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়েছি, এ সত্যি কথাটি জনগণকে বলতে হবে। শুধু ভালো কাজ করাই যথেষ্ট নয়, জনগণ যাতে মনে করে আমরা ভালো কাজ করছি।
সাবেক এ গভর্নর বলেন, এবারের বাজেটটি একটি আপদকালীন বাস্তবতার নিরিখে তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বাজেট। শুধু ভূ-তাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জ নয়, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে, অনেক সংকট তৈরি হয়েছে। সেই সংকটগুলো মোকাবিলা করার জন্য কি বাজেট করা হয়েছে, সেটি আমাদের জানা উচিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে সাফল্য অর্জন করেছে, তার পেছনে তিনটি খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যা কৃষি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স। এ তিনটি খাত আমাদের শক্তির উৎস। আমাদের অর্থনীতিকে শক্ত পাটাতনের ওপর দাঁড় করাতে এ তিনটি খাত কাজ করেছে। গত দেড় দশকে আমরা যে অর্জন করেছি, তার পেছনে এ তিনটি খাতের ভূমিকা অনন্য। ২০০৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমাদের অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। এ সময়ে আমাদের কৃষি উৎপাদন চারগুণ বেড়েছে। বার্ষিক রপ্তানি বেড়েছে পাঁচগুণ এবং রেমিট্যান্স বেড়েছে ছয়গুণ।
মতিউর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক ও মানবিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের যে সাফল্য অর্জন হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা গেলে চলমান সংকটও অতিক্রম করা সম্ভব হবে। তবে তা করার জন্য আসন্ন বাজেটটি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। বাজেট দেওয়াই যথেষ্ট নয়, এটাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বছরটি বাজেট বাস্তবায়নের জন্য কঠিন। কারণ এটি নির্বাচনের বছর। এ বছরের শেষ তিন মাস নির্বাচনের ডামাডোলে উন্নয়ন বেশ খানিকটা ব্যহত হবে। সেজন্য উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য এটি খুবই কঠিন বছর। অনেকে মনে করছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটটি উচ্চাভিলাষী। এ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়। কিন্তু গত ১৫-১৬ বছরে আমরা যে শক্তি অর্জন করেছি, তাতে আমরা মনে করি না এ বাজেটটি উচ্চাভিলাষী। বরং আমি বলব, বাজেটটি ভবিষ্যতমুখী। নির্বাচনের বছরেও কেউ সংস্কারমুখী ও ভবিষ্যতমুখী বাজেট করতে পারে, সেটিও প্রশংসার দাবি করে।
            
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
                                                        
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: