
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ১২টি দেশের জন্য শুল্কহার চূড়ান্ত করেছেন। ওই সব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে যেসব পণ্য রপ্তানি করে, সেগুলোর ওপর কত হারে শুল্ক আরোপ করা হবে– তা নির্ধারণ করে প্রস্তুত চিঠিতে সই করেছেন তিনি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, ওই সব চিঠি আগামী সোমবার পাঠানো হবে। তবে এই তালিকায় বাংলাদেশ আছে কি না তা জানা যায়নি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার নিউ জার্সিতে যাওয়ার আগে এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প একথা জানান। তবে কোন কোন দেশে এই শুল্কসংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হবে, তা জানা যায়নি। তিনি বলেছেন, সোমবার এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রথম দফার চিঠিগুলো শুক্রবারই পাঠানো হবে। তবে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় ছুটি থাকায় তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে আর্থিক বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারকেরা নিজেদের অর্থনীতি রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে গত এপ্রিল মাসে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, অধিকাংশ দেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ১০ শতাংশ হারে বেসিক শুল্ক আরোপ করবে। পাশাপাশি কিছু দেশের ক্ষেত্রে শুল্কহার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হবে।
তবে ১০ শতাংশের বেশি যেসব শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছিল, তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছিল, যাতে এই সময়ের মধ্যে সমঝোতার সুযোগ থাকে। এই ৯০ দিনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৯ জুলাই। তবে শুক্রবার ভোরে ট্রাম্প বলেন, শুল্কহার আরও বাড়তে পারে। সেটা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। বেশির ভাগ শুল্কই কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি কিছু চিঠিতে সই করেছি। সেগুলো সোমবার পাঠানো হবে। সম্ভবত ১২টা চিঠি। বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপ করা হবে।’
ট্রাম্প ও তাঁর শীর্ষ সহযোগীরা শুরুতে বলেছিলেন, তাঁরা বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালাবেন। তবে জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বড় বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনায় একের পর এক ব্যর্থতার পর ট্রাম্প সে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।
শুক্রবার রাতে ট্রাম্প বলেন, ‘চিঠি পাঠানো অনেক সহজ...আলোচনা করার চেয়ে ভালো।’ ৯ জুলাইয়ের সময়সীমার আগেই কিছু বিস্তৃত বাণিজ্য চুক্তি হবে বলে যে আশাবাদ তিনি করেছিলেন, শুক্রবার সে বিষয়ে কিছু বলেননি।
হোয়াইট হাউসের কৌশল বদলের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, শুল্ক থেকে শুরু করে কৃষিপণ্য আমদানির নিষেধাজ্ঞার মতো নানা অশুল্ক বাধা নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সফলভাবে আলোচনা শেষ করা বেশ কঠিন। বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি করতে সাধারণত বছরের পর বছর সময় লাগে।
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র শুধু দুটি দেশের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরেছে। ব্রিটেনের সঙ্গে মে মাসে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী ১০ শতাংশ বেসিক শুল্ক বহাল থাকবে। এ ছাড়া গাড়ি ও বিমান ইঞ্জিনের মতো কিছু খাতে ব্রিটেন বিশেষ সুবিধা পাবে। ভিয়েতনামের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী দেশটির অনেক পণ্যের ওপর শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হবে। অন্যদিকে অনেক মার্কিন পণ্য ভিয়েতনামে শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশ করতে পারবে।
ভারতের সঙ্গে যে চুক্তির আশা করা হচ্ছিল, তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা শুক্রবার বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য আলোচনা সফল হয়নি। তারা আপাতত শুল্ক বৃদ্ধির ঝুঁকি এড়াতে বর্তমান অবস্থা বজায় রাখার চিন্তা করছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: