
আহমেদাবাদে ভয়াবহ এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার এক মাস পর প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তদন্ত প্রতিবেদনে পাইলটদের শেষ মুহূর্তের চাঞ্চল্যকর কথাবার্তা ওঠে এসেছে। গত ১২ জুনের এই দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২৭০ জন প্রাণ হারান।
শনিবার ভোরে ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো ১৫ পৃষ্ঠার একটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, উড্ডয়নের ঠিক পরপরই বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানের দুটি ইঞ্জিনের ফুয়েল সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ অবস্থায় চলে যায় – অর্থাৎ ইঞ্জিনে জ্বালানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে শোনা যায়, একজন পাইলট অন্যজনকে জিজ্ঞেস করছেন, তুমি ফুয়েল বন্ধ করলে কেন? জবাবে অপর পাইলট জানান, তিনি কিছুই করেননি।
এর কিছু সেকেন্ড পরই, বিমানের দুটি ইঞ্জিনের ফুয়েল সুইচ আবার ‘কাটঅফ’ থেকে ‘রান’–এ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন পাইলটরা, যার মাধ্যমে বোঝা যায় তারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। অ্যানহ্যান্সড এয়ারবোর্ন ফ্লাইট রেকর্ডার (ইএএফআর)-এর তথ্যেও এটি জানা গেছে।
তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফ্লাইটের সময় ফুয়েল সুইচ ‘কাটঅফ’ থেকে ‘রান’ অবস্থায় নিলে, প্রতিটি ইঞ্জিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইগনিশন ও জ্বালানি সরবরাহ চালু করে আবার চালু হওয়ার চেষ্টা করে।
তবে এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই ইএএফআর-এর রেকর্ডিং থেমে যায়। এরপরই একজন পাইলট ‘মে-ডে’ সংকেত পাঠান। কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে কল সাইন জানতে চাওয়া হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তারপরই দেখা যায় বিমানটি বিমানবন্দরের সীমানা পেরিয়ে এক মেডিকেল ছাত্রাবাসে আছড়ে পড়ে এবং সাথে সাথে বিস্ফোরিত হয়।
বিমানটি ততক্ষণে পুরোপুরি জ্বালানিতে ভরা ছিল। এতে বিমানে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই এবং ভূমিতে থাকা অন্তত ৩০ জন নিহত হন। উড্ডয়নের মাত্র ৩২ সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানটি ভেঙে পড়ে।
বিমানটি উড়াচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবরওয়াল, যিনি একজন লাইন ট্রেনিং ক্যাপ্টেন ছিলেন। তার ৮ হাজার ২০০ ঘণ্টা উড়ানের অভিজ্ঞতা ছিল। সহকারী পাইলট ছিলেন ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দার। তার ১ হাজার ১০০ ঘণ্টার অভিজ্ঞতা ছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুইজনই স্বাস্থ্যবান, বিশ্রামপ্রাপ্ত এবং অভিজ্ঞ ছিলেন।
তদন্তে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নাশকতার প্রমাণ মেলেনি। তবে মার্কিন ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) একটি পূর্ববর্তী সতর্কতা এতে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সতর্কতায় বলা হয়েছিল, বোয়িং ৭৩৭ মডেলের কিছু বিমানে ফুয়েল সুইচের লকিং ফিচার ডিঅ্যাক্টিভ করা ছিল, যদিও তখন সেটিকে বিপজ্জনক বলা হয়নি।
রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গেই বিমানটির র্যাম এয়ার টারবাইন (র্যাট) সক্রিয় হয়। এটি সাধারণত ইঞ্জিন ও হাইড্রোলিক সিস্টেম সম্পূর্ণ ব্যর্থ হলে সক্রিয় হয়। সিসিটিভি ফুটেজেও এ দৃশ্য দেখা গেছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিমানটি রানওয়ে পার হওয়ার আগেই উচ্চতা হারাতে শুরু করে। তখন আশেপাশে কোনো পাখির উপস্থিতিও দেখা যায়নি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: