আইনি চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ট্রাম্পের শুল্কের পক্ষে রায় দিল আদালত

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৩০ মে ২০২৫ ১৯:১৩

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আদায় আপাতত চালিয়ে যেতে পারবেন বলে রায় দিয়েছেন দেশটির একটি আপিল আদালত। মাত্র একদিন আগেই স্থানীয় এক আদালত এই শুল্ক আদায়কে বেআইনি ঘোষণা করে তা আটকে দিয়েছিল।

ট্রাম্প এই শুল্ক আরোপের মাধ্যমে তার ক্ষমতা লঙ্ঘন করেছেন বলে রায় দেওয়া হয়েছিল।

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের ওই রায় ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ক্ষুব্ধ করে, তারা এটিকে বিচারিক সীমা লঙ্ঘনের উদাহরণ বলে অভিহিত করে।

নিম্ন আদালতের ওই আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করার জন্য হোয়াইট হাউসের একটি আবেদন মঞ্জুর করেছেন একটি ফেডারেল আপিল আদালত।

শুল্ক আরোপ সংক্রান্ত যেসব পদক্ষেপ ট্রাম্পের এজেন্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে নাড়া দিয়েছে সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার।

আপিল আবেদনে ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, একদিন আগে কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের জারি করা সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে অসঙ্গতভাবে অনুমানের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া। মাসের পর মাস ধরে চালানো বাণিজ্য আলোচনার ওপরও ওই রায় হুমকি তৈরি করেছে।

আবেদনে বলা হয়েছে, ‘আদালত নয়, বরং রাজনৈতিক শাখাগুলোই বৈদেশিক নীতি তৈরি করে এবং অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ করে।’

বৃহস্পতিবার আপিল আদালত থেকে শুল্ক বহাল রাখার সিদ্ধান্ত আসে। এই সিদ্ধান্ত আসার কিছুক্ষণ আগে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা অন্য কোনো প্রেসিডেন্টের সংবেদনশীল কূটনৈতিক বা বাণিজ্য আলোচনা যদি অ্যাক্টিভিস্ট বিচারকদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয় তবে আমেরিকা কাজ করতে পারবে না।’

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের রায়ের তীব্র সমালোচনা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আশা করা যায় সুপ্রিম কোর্ট এই ভয়াবহ, দেশকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দ্রুত এবং কার্যকরভাবে বাতিল করবে।’

নিউইয়র্কের স্বল্প-পরিচিত কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের বুধবারের রায় চীন, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আসা পণ্যের ওপর ট্রাম্প আরোপিত শুল্ক বাতিল করে দিয়েছিল, যা তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করেছিলেন এবং এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন ফেন্টানাইল মাদক চোরাচালান মোকাবিলার উদ্দেশ্যে এটি করা হয়েছে।

গত মাসে ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে যে আমদানি কর আরোপ করেছিলেন, একইসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ এবং চীনসহ অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর উচ্চতর যে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ আরোপ করেছিলে, নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তের ফলে সেগুলোও বাতিল হয়ে যেত।

১৯৭৭ সালের যে আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের ওপর ভিত্তি করে ট্রাম্প অনেক দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তাতে এই ধরনের ব্যাপক শুল্ক আরোপের অনুমতি ছিল না, নিম্ন আদালত জানিয়েছে।

তবে ওই আদালতের রায়ে গাড়ি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ওপর প্রভাব ফেলেনি, যা অন্য আইনের অধীনে বাস্তবায়িত হয়েছিল।

তবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা চলমান থাকায় হোয়াইট হাউস তাদের অনেক শুল্কের কিছু অংশ স্থগিত বা সংশোধন করেছে।

আপিল আদালতের সিদ্ধান্তের ফলে মামলাটি বিচারাধীন থাকাকালে ট্রাম্প প্রশাসন আপাতত শুল্ক আরোপ করতে পারবে, আগামী ৫ জুন এর পরবর্তী শুনানি রয়েছে।

বৃহস্পতিবার আরেকটি ফেডারেল আদালতও কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের রায়ের বিষয়ে একই ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। বিচারক রুডলফ কনট্রেরাস বলেছেন, শুল্ক আরোপের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কর্তৃত্বের বাইরে চলে গেছে ঠিক, তবে সেই রায় শুধুমাত্র মামলার একটি খেলনা কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: